আরও দেখুন
কানাডার নিম্নকক্ষের নির্বাচনে লিবারেল পার্টি বিজয়ী হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিজয়ী দল পেয়েছে 43.5% ভোট এবং কনজারভেটিভরা পেয়েছে 41%।
ভোট গণনা এখনো সম্পূর্ণ হয়নি এবং এই বিজয় অনেকটাই প্রতীকী — কারন এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে কারনির দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পেরেছে কি না। এখনও পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে, তবে লিবারেলদের সম্ভবত জোট সরকার গঠন করতে হবে।
তবুও, একটি বিষয় স্পষ্ট: কানাডায় ক্রমবর্ধমান ট্রাম্প-বিরোধী মনোভাবের মধ্যেও লিবারেল পার্টি ক্ষমতায় থাকছে। কয়েক মাস আগেও দলটির জনপ্রিয়তা তলানিতে ছিল — কানাডিয়ানরা জাস্টিন ট্রুডোর নীতিতে হতাশ ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হল, ডোনাল্ড ট্রাম্পই যেন লিবারেল পার্টিকে "উদ্ধার" করেছেন, কারণ তার বিরোধিতার মধ্য দিয়ে কানাডিয়ানদের ঐক্যবদ্ধ ও সক্রিয় করা গেছে। কারনি তার প্রচারণায় ব্যাপকভাবে ট্রাম্প-বিরোধিতা তুলে ধরেছেন, যার ফলে লিবারেলরা পেছন থেকে সামনের সারিতে চলে আসে। প্রাথমিক ফলাফল বলছে, এই কৌশল সফল হয়েছে — কারনি হাউস অব কমন্সে 343টি আসনের মধ্যে অন্তত 168টি সিট নিশ্চিত করেছেন।
কারনি ফরেক্স ট্রেডারদের কাছে পরিচিত একটি নাম। তিনি গোল্ডম্যান শ্যক্সের বিভিন্ন শাখায় (টরন্টো, নিউইয়র্ক, লন্ডন, টোকিও) ১০ বছরের বেশি সময় কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর হন এবং ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের নেতৃত্বে ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের কড়া সমালোচনা করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে, কানাডার বাণিজ্য অংশীদারদের পরিসর বৃদ্ধি করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানো হবে।
নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলের প্রতি কানাডিয়ান ডলার খুব একটা প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। USD/CAD পেয়ারের দর কয়েক ডজন পিপস বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে 1.38 রেঞ্জের মধ্যেই রয়ে গেছে। ক্রেতারা দৈনিক সর্বোচ্চ লেভেল 1.3870 পর্যন্ত টেনে নিয়েছে, তবে এরপর ঊর্ধ্বমুখী মোমেন্টাম দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পেয়ারটির মূল্য সাইডওয়েজ রেঞ্জে প্রবেশ করে।
নির্বাচনের ফলাফল ট্রেডারদের বেশি প্রভাবিত করেনি কারণ মার্কেটের ট্রেডাররা ইতোমধ্যেই অনুমান করছিল যে কারনি দায়িত্বে বহাল থাকবেন। বিভিন্ন জরিপে লিবারেলদের প্রতি সমর্থন বাড়ছে এমনটাই দেখা যাচ্ছিল। একদিকে, অতিরিক্ত "আশাবাদী" জরিপ লুনি-র ক্ষতি করেছে: প্রত্যাশিত ফলাফল না আসায়, এবং লিবারেলরা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় এখন সরকার গঠনের জন্য তাদের ছোট দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। লক্ষণীয় যে, কনজারভেটিভরা আগের নির্বাচনের তুলনায় ভালো ফল করেছে — ১২০ সিট থেকে বেড়ে ১৪৪ সিট পেয়েছে।
তবুও, এতে খুব একটা সন্দেহ নেই যে লিবারেল পার্টি জোট গঠন করবে এবং মার্ক কারনি কানাডার নেতৃত্বে আসবেন। এই দুর্বল বিজয় USD/CAD পেয়ারের বিক্রেতাদের হতাশ করলেও, লুনির দর এখনো পরিচিত রেঞ্জেই রয়ে গেছে। কানাডিয়ান ডলার টানা তৃতীয় সপ্তাহ ধরে 1.3800–1.3900 করিডোরে ট্রেড করছে, তাই আজকের মূল্যের ওঠানামা বৃহত্তর প্রবণতার সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ।
USD/CAD পেয়ারের সাপ্তাহিক চার্টে দেখা যাচ্ছে, মার্চের শেষ দিকে এবং এপ্রিলের শুরুতে মার্কিন ডলারের দরপতনের প্রেক্ষিতে এই পেয়ারের মূল্যের অতিরিক্ত অস্থিরতা দেখা গিয়েছিল। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির প্রতিক্রিয়ায় পেয়ারটির মূল্য প্রায় 600 পিপস নিচে নেমে আসে। তবে এরপর থেকে অস্থিরতার মাত্রা দ্রুত কমে গেছে। গত তিন সপ্তাহে লুনির দর 1.3800–1.3900 রেঞ্জের মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে। ক্রেতারা মাঝে মাঝে মূল্যকে 1.3900-এর লেভেল ব্রেক করে উপরের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, আর বিক্রেতারা 1.3800 এর লেভেল ব্রেক করে মূল্যকে নিচের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে — কিন্তু প্রতিবারই মূল্য পুরনো লেভেলে ফিরে আসছে।
অর্থাৎ, ট্রেডাররা এখন "অপেক্ষা-পর্বে" আছে, যার কেন্দ্রে রয়েছে অটোয়া ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার আসন্ন আলোচনা। আজ কারনি জানিয়েছেন, তার প্রথম অগ্রাধিকার হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা। গত সপ্তাহে ট্রাম্প আবারও কানাডার সার্বভৌমত্ব নিয়ে হুমকি দিয়ে বলেন, "যদি যুক্তরাষ্ট্র কানাডার পণ্য না কিনে, তাহলে কানাডা বলে কিছু থাকবে না।" মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও (যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী শাখার তৃতীয় সর্বোচ্চ পদধারী) এই মতকে সমর্থন করে বলেন, "কানাডা বরং যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হলেই ভালো হতো।"
এখন, যখন কারনি তার ম্যান্ডেট পেয়েছেন, তখন পরিস্থিতি হয় আরও উত্তপ্ত হবে, না হয় কিছুটা প্রশমনের দিকে যাবে — যদি দুই পক্ষই আগ্রাসী বক্তব্যের মধ্যেও কোন যৌথ ভিত্তি খুঁজে পায়।
প্রচারণা চলাকালে, কারনি এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পয়লিভ্র উভয়েই USMCA (যুক্তরাষ্ট্র–কানাডা–মেক্সিকো চুক্তি) পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দেন, যেটি কানাডার মোট রপ্তানির ৭০%। তবে, প্রচারণা-ভাষণ এক জিনিস, বাস্তব পদক্ষেপ অন্য জিনিস। তার প্রথম প্রকাশ্য বিবৃতিতে কারনি বলেন, তিনি "যত দ্রুত সম্ভব" ভবিষ্যত অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই আলোচনাগুলো ফলপ্রসূ হবে কি না, তা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে। তার পূর্বসূরি জাস্টিন ট্রুডো ট্রাম্পের মার-আ-লাগো রিসোর্টে একাধিকবার সফর করে "সফল এবং উৎসাহব্যঞ্জক" সংলাপের প্রশংসা করলেও পরে ট্রাম্প কানাডার ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন এবং কার্যত কানাডাকে "যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য" হিসেবে ঘোষণা করেন।
সারসংক্ষেপ: