আরও দেখুন
আগামী সপ্তাহে সকল ডলার পেয়ারের মূল্যের অস্থিরতা দেখা যেতে পারে। মার্কেটের ট্রেডাররা জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতিনিধিদের বৈঠকের ফলাফলের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানাবে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদনও প্রকাশিত হবে। তৃতীয়ত, আমরা ফেডারেল রিজার্ভের অনেক কর্মকর্তার বক্তব্য শুনতে পাব, যার মধ্যে রয়েছেন জেরোম পাওয়েল, যিনি বৃহস্পতিবার বক্তব্য দেবেন। এই সমস্ত বিষয়গুলো ইঙ্গিত করছে যে, এ সপ্তাহে EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ব্যাপক অস্থিরতা বিরাজ করবে।
মূল আলোচ্য বিষয়: যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে আসন্ন আলোচনা। জেনেভায় অনুষ্ঠিত প্রথম দফার বৈঠকের প্রাথমিক ফলাফলের পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সুইজারল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি ও চীনের ভাইস-প্রিমিয়ার (অর্থনৈতিক বিষয়ক) মধ্যে একটি প্রাথমিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিনিধিত্বের স্তর বিবেচনায়, ট্রেডারদের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে যে এই বৈঠক পূর্ণমাত্রার আলোচনার সূচনা হতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রাথমিক মন্তব্যগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায়, এই আশাবাদ অযৌক্তিক নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতে, চীনের সঙ্গে "বড় ধরনের অগ্রগতি" হয়েছে, যা "সম্পূর্ণ পুনর্গঠন"-এর দিকে যেতে পারে। তিনি বলেন, জেনেভার বৈঠকের ফলাফল "খুবই ভালো ছিল," এবং "অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে ও অনেক বিষয়েই একমত হওয়া গেছে।"
রবিবার দ্বিতীয় দিনের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদি চীন ট্রাম্পের এই আশাবাদী মনোভাবের প্রতিধ্বনি দেয় (বেইজিং এখনো শনিবারের বৈঠক সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি), তাহলে ডলার উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণভাবে দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা পাবে। যদিও পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য আলোচনা শুরু হতে সপ্তাহ বা মাস লেগে যেতে পারে, তবে স্বল্পমেয়াদে যেকোনো অগ্রগতি মার্কেটে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চার সপ্তাহের শুল্ক সংক্রান্ত অচলাবস্থার পর আলোচনায় গতি আসলে ডলারের পক্ষে অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
তবে, যদি চীন জেনেভা বৈঠক সম্পর্কে শীতল প্রতিক্রিয়া জানায়, তাহলে ডলার আবারও চাপের মুখে পড়তে পারে। এটি পুরোপুরি সম্ভব, কারণ ট্রাম্প বা হোয়াইট হাউসের কোনো কর্মকর্তা সুইজারল্যান্ডে প্রথম দিনের আলোচনা নিয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি। জেনেভা থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রেস বিবৃতি আসেনি। তাই ডলারের ক্রেতাদের এখনই উদযাপন শুরু করা উচিত নয়: যদি আমরা ট্রাম্পের অত্যন্ত আশাবাদী বক্তব্য থেকে দূরে থাকি (যা তিনি দ্বিতীয় দফার আলোচনার আগেই দিয়েছেন), তাহলে বড় ধরনের অগ্রগতির সম্ভাবনা এখনো অস্পষ্ট। ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি হোয়াইট হাউস ও বিশেষ করে বেইজিংয়ের আনুষ্ঠানিক মন্তব্যের ওপর নির্ভর করবে।
আলোচনা বাদে যেসব প্রতিবেদন EUR/USD পেয়ারকে প্রভাবিত করবে: যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন।
মঙ্গলবার, ১৩ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এপ্রিল মাসের কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বা ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) প্রকাশিত হবে। যেহেতু এপ্রিলেই ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা কার্যকর হয়েছে, ট্রেডাররা মূল্যায়ন করবেন, এই শুল্কগুলো কত দ্রুত ও কতটা উল্লেখযোগ্যভাবে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলেছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, CPI বা ভোক্তা মূল্য সূচক বার্ষিক ভিত্তিতে ২.৪%-এ থাকবে, এবং কোর CPI ৩.০%-এ পৌঁছাতে পারে (পূর্ববর্তী মাসে এটি ছিল ২.৮%)।
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যস্ফীতি বিষয়ক সূচক—প্রোডিউসার প্রাইস ইনডেক্স বা উৎপাদক মূল্য সূচক (PPI) প্রকাশিত হবে। এখানেও একই ধরনের ফলাফল প্রত্যাশিত: সামগ্রিক PPI বা উৎপাদক মূল্য সূচক পূর্ববর্তী মাসের মতো ২.৭% থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং কোর ইনডেক্স কিছুটা বাড়বে ৩.৫%-এ (আগের মাসে ছিল ৩.৩%)।
শুক্রবার, ১৬ মে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যস্ফীতি বিষয়ক সূচক প্রকাশিত হবে: ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের ভোক্তা আস্থা সূচক। চার মাসের টানা পতনের পর, এই সূচকটি মে মাসে (৫৩.১) কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে বলে প্রত্যাশা। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে ইনফ্লেশন এক্সপেকটেশন ইন্ডিকেটর বা মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশা সূচকের ওপর, যা মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা হিসাব করা হয়। এপ্রিল মাসে এই সূচক ৬.৫%-এ পৌঁছায় (যা ১৯৮১ সালের পর সর্বোচ্চ)। যদি মে মাসেও এই প্রত্যাশা বেড়ে যায় (যদিও এখনো কোনো পূর্বাভাস দেয়া হয়নি), তাহলে ডলারের ক্রেতারা এটিকে নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে, কারণ তাহলে ট্রেডাররা আবারও স্ট্যাগফ্লেশন বা স্থবিরতার ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা শুরু করবে।
তবে, মার্কিন ডলারের "মুভমেন্ট" মূলত জেনেভা বৈঠকের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে। যদি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সুইজারল্যান্ডে আলোচনার ভিত্তি নির্ধারণে একমত হয় এবং উত্তেজনা প্রশমনের পথে এগোয়, তাহলে ডলার অন্য সব সম্ভাব্য নেতিবাচক চাপ মোকাবিলা করতে পারবে। অর্থাৎ, তখন ভবিষ্যতের আলোচনার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট মূল্যায়ন করা হবে। ধরে নেওয়া যাক, পূর্বাভাসের বিপরীতে CPI ও PPI যদি যথেষ্ট বেড়ে যায়, তবুও যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আলোচনায় অংশ নেয়, তাহলে ট্রেডাররা হয়তো সেটিকে গুরুত্ব দেবে না। অন্যদিকে, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে প্রতিটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের নেতিবাচক ফলাফল পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলবে।
মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদনের পাশাপাশি, আগামী সপ্তাহে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।
মঙ্গলবারের ইউরোপীয় সেশনে ZEW ইনস্টিটিউটের মে মাসের সূচক প্রকাশিত হবে। এপ্রিলের হতাশাজনক ফলাফলের পর এখানে ইতিবাচক ফলাফলের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, জার্মান ব্যবসায়িক আস্থা সূচকটি এপ্রিলের -14 থেকে মে মাসে 9.8-এ উন্নীত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বুধবার প্রকাশিত হবে জার্মানির চূড়ান্ত মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রতিবেদন। এখানে চূড়ান্ত অনুমান প্রাথমিক অনুমানের সঙ্গে মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে (মোট বার্ষিক CPI বা ভোক্তা মূল্য সূচকের বৃদ্ধি 2.1%, হারমোনাইজড CPI 2.1%)।
PPI ছাড়াও, বৃহস্পতিবার EUR/USD পেয়ারের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন হবে যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল সেলস বা খুচরা বিক্রয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন। পূর্বাভাস অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে মোট বিক্রি 0%-এ নেমে আসবে (মার্চে 1.4% বৃদ্ধি পেয়েছিল), এবং গাড়ি বাদ দিলে বিক্রি মাত্র 0.3% বৃদ্ধি পাবে। একই দিনে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ফিলাডেলফিয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাকটিভিটি ইনডেক্স বা উৎপাদন কার্যক্রম সূচক (পূর্বাভাস: -9.9, এপ্রিলের -24 এর পর) এবং নিউ ইয়র্ক এম্পায়ার স্টেট ম্যানুফ্যাকচারিং ইনডেক্স বা উৎপাদক সূচক (পূর্বাভাস: -7.9, পূর্বে ছিল -8.1) প্রকাশিত হবে। এছাড়াও, একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে—পূর্বাভাস অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে উৎপাদন 0.3% বাড়তে পারে (পূর্ববর্তী মাসে 0.2% হ্রাস পেয়েছিল)।
শুক্রবার প্রকাশিত হবে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফ্লেশন ইন্ডিকেটর বা মুদ্রাস্ফীতি সূচক, সঙ্গে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রে ইস্যুকৃত বিল্ডিং পারমিট বা নির্মাণ অনুমোদনের সংখ্যা (পূর্বাভাস: 0.9% হ্রাস) এবং নতুন নির্মিত বাড়ির পরিমাণ (পূর্বাভাস: 12.4% হ্রাস)।
এছাড়াও, সপ্তাহব্যাপী ফেডের একাধিক কর্মকর্তার বক্তব্য থাকবে:
নিশ্চিতভাবেই পাওয়েলের বক্তব্যের দিকেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগ থাকবে। তিনি সম্ভবত মে মাসের বৈঠকের মূল বার্তাগুলোই পুনর্ব্যক্ত করবেন। বিশেষ করে, তিনি জোর দেবেন যে ফেড "সঠিক অবস্থানে" রয়েছে এবং শুল্কের প্রভাব সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা না পাওয়া পর্যন্ত সিদ্ধান্তে বিলম্ব করাই উপযুক্ত। আবারও বলছি, অনেক কিছু নির্ভর করবে জেনেভা বৈঠকের ফলাফলের উপর—যদি ওয়াশিংটন ও বেইজিং-এর মধ্যে একটি সম্ভাব্য চুক্তির আভাস দেখা যায়, তাহলে পাওয়েলের বক্তব্য আরও আশাবাদী হবে, যা ডলারকে অতিরিক্ত সমর্থন দেবে।
সুতরাং, EUR/USD পেয়ারের মূল্যের মুভমেন্ট মূলত নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে জেনেভায় অনুষ্ঠিত আলোচনার ফলাফলের উপর। বাকি সব মৌলিক উপাদান মূল্যায়ন করা হবে এই আলোচনার ফলাফল দিয়ে—যদি জেনেভা বৈঠক সফল হয়, তাহলে ডলার সমর্থন ও একধরনের "প্রতিরোধ ক্ষমতা" পাবে; অন্যদিকে, যদি ট্রাম্পের বক্তব্যের বিপরীতে আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে ডলার অত্যন্ত দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকবে। তবে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না—সপ্তাহের শুরুতেই EUR/USD ট্রেডাররা "সুইস উইকএন্ড"-এর মূল্যায়ন করবে এবং তার ভিত্তিতে মার্কিন ডলারের শক্তিশালী হওয়া বা দুর্বল হওয়ার রায় দেবে।