আরও দেখুন
বুধবার আবারও EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট শুরু হয়েছে, এবং এখন নির্দ্বিধায় বলা যায় যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কেবল ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমেই নয়, বরং হায়ার টাইমফ্রেমেও বিদ্যমান। বিশেষ করে, ৪-ঘণ্টার এবং দৈনিক টাইমফ্রেমে "ডোনাল্ড ট্রাম্পের" প্রভাবে সৃষ্ট সেই পুরোনো প্রবণতা পুনরুত্থান দেখা যাচ্ছে। সোমবার আমরা বলেছিলাম যে মার্কেটের ট্রেডাররা আবার যেকোনো আনুষ্ঠানিক অজুহাত ব্যবহার করে ডলার বিক্রি করা শুরু করেছে। মঙ্গলবারে ডলার বিক্রির জন্য কোনো কারণই ছিল না। বুধবারেও একই অবস্থা দেখা গেছে।
তবুও, শুধুমাত্র এই সপ্তাহেই মার্কিন ডলার প্রায় 170 পিপস দরপতনের শিকার হয়েছে। কোনো উল্লেখযোগ্য খবর নেই, কোনো শক্তিশালী কারণ নেই। এমনকি শুরুতে মার্কেটের ট্রেডাররা বাণিজ্য যুদ্ধ প্রশমনের খবরকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করলেও, সেই আশাবাদ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আর "ট্রাম্প স্টাইলে উত্তেজনা প্রশমন"—যার মানে মূলত দর কষাকষির মাধ্যমে শুল্ক হ্রাস—এখন আর ট্রেডারদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে না।
সমস্যাটা হচ্ছে ট্রেডাররা এখন বুঝতে পারছে যে ট্রাম্প ও তার টিমের পদক্ষেপে সেই ব্যাপক "অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি" শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। বরং অর্থনৈতিক মন্দা, শ্রমবাজারে দুর্বলতা এবং বাজেট ঘাটতির প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনাই এখন বেশি। আন্তর্জাতিকভাবে ট্রাম্প ইতোমধ্যেই বিশ্বের অর্ধেক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। যদি কেউ হাসিমুখে তাকে স্বাগত জানায়, তাহলে সেটা কেবল যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি বিরোধিতা না করার কৌশল। অভ্যন্তরীণ পর্যায়েও ট্রাম্প একাধিক বিতর্কিত আইনগত উদ্যোগ নিচ্ছেন, যা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ফলে, মার্কিন ডলার প্রায় প্রতিদিনই দরপতনের শিকার হচ্ছে।
গতকাল 5-মিনিটের টাইমফ্রেমে 1.1321 লেভেলের আশেপাশে তিনটি বাই সিগনাল গঠিত হয়। মূল্য প্রথমে এই লেভেল ব্রেক করে এবং এরপর একাধিকবার এই লেভেল থেকে রিবাউন্ড করে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ট্রেডাররা লং পজিশন ওপেন করতে পারতেন। যেহেতু নিকটতম লক্ষ্যমাত্রা অনেক দূরে ছিল, তাই সন্তোষজনক মুনাফা অর্জনের পর ট্রেডগুলো ম্যানুয়ালি ক্লোজ করা যেত।
সর্বশেষ কমিটমেন্ট অব ট্রেডার্স (COT) রিপোর্ট ১৩ মে প্রকাশিত হয়েছে। উপরের চার্ট অনুযায়ী, নন-কমার্শিয়াল ট্রেডারদের নিট পজিশনের সংখ্যা দীর্ঘদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বিক্রেতারা অল্প সময়ের জন্য মার্কেটে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল, তবে দ্রুত তা হারিয়ে ফেলে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলারের দরপতন হচ্ছে। যদিও বলা যাচ্ছে না এই প্রবণতা কতদিন চলবে, তবুও COT রিপোর্ট বড় ট্রেডারদের মানসিকতা প্রতিফলিত করে—যদিও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই মানসিকতা দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে।
ইউরোর পক্ষে কোনো এমন কোনো মৌলিক কারণ নেই যা এটিকে শক্তিশালী করতে পারে, তবে ডলারের উপর রাজনৈতিক চাপ অনেক বেশি। আরও কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে EUR/USD পেয়ারের মূল্যের কারেকশন চলমান থাকতে পারে, তবে গত ১৬ বছরের দীর্ঘমেয়াদী নিম্নমুখী প্রবণতা এত সহজে বদলাবে না। একবার ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ শেষ হলে, পুনরায় ডলারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হতে পারে।
COT চার্টে লাল ও নীল লাইন আবারও একে অপরকে অতিক্রম করেছে, যা একটি নতুন বুলিশ প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। সর্বশেষ সাপ্তাহিক রিপোর্ট অনুযায়ী, নন-কমার্শিয়াল ট্রেডারদের লং পজিশনের সংখ্যা 15,400টি বেড়েছে, আর শর্ট পজিশনের সংখ্যা বেড়েছে 6,300টি। ফলে নিট পজিশনের সংখ্যা 9,000 কন্ট্রাক্ট বেড়ে গেছে।
ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে EUR/USD পেয়ারের মূল্য ইচিমোকু ইন্ডিকেটর লাইনের ওপরে কনসোলিডেট করে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু করার চেষ্টা করছে। মার্কিন ডলারের ভবিষ্যৎ এখনো বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে। যদি বাণিজ্য চুক্তি সই হয় এবং শুল্ক হ্রাস পায়, তাহলে ডলারের দর বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে, সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে এই পেয়ারের মূল্যকে অবশ্যই ইচিমোকু লাইনের এবং ট্রেন্ডলাইনের নিচে কনসোলিডেশন করতে হবে। ডলারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা এখনো রয়েছে, তবে তা সীমিত—কারণ ট্রেডাররা এখন "ট্রাম্প কারেন্সি" থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চায়।
২২ মে ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লেভেলগুলো হল:1.0823, 1.0886, 1.0949, 1.1006, 1.1092, 1.1147, 1.1185, 1.1234, 1.1274, 1.1321, 1.1426, 1.1534, সেইসাথে ইচিমোকু ইন্ডিকেটরের সেনকৌ স্প্যান বি লাইন (1.1224) এবং কিজুন-সেন লাইন (1.1247) রয়েছে। ইচিমোকু লাইনগুলো দিনের বেলা অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে, তাই ট্রেডারদের সিগনাল মূল্যায়নের সময় এই লাইনগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। প্রত্যাশিত নিয়ম অনুযায়ী, মূল্য সঠিক দিকের দিকে 15 পিপস মুভমেন্ট প্রদর্শন করলে ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করুন—এতে ভুল সিগনালের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রে সার্ভিস ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের বিজনেস অ্যাক্টিভিটি সূচক (PMI) প্রকাশিত হবে, সাথে আরও কিছু স্বল্প গুরুত্বসম্পন্ন প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হবে। এই PMI প্রতিবেদনগুলোর ফলাফল মার্কেটে সামান্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, তবে সামগ্রিকভাবে মার্কেটে বুলিশ প্রবণতাই বজায় থাকবে এবং এতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম।