আরও দেখুন
বৃহস্পতিবার নিম্নমুখী প্রবণতার সাথে EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের ট্রেড করা হয়েছে, যা সামগ্রিক প্রবণতার ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচনা করা যায়। গতকাল প্রকাশিত প্রায় সকল সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের ফলাফল ইউরোর জন্য নেতিবাচক ছিল, এবং মার্কেটের ট্রেডাররা ডলারের প্রতি কিছুটা সহনশীলতা দেখিয়েছে। সারাদিনে মার্কিন ডলারের দর প্রায় ৫০ পিপস বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও এটি ঘণ্টাভিত্তিক ও ৪-ঘণ্টার টাইমফ্রেমে বর্তমান প্রবণতায় কোনো বড় পরিবর্তন আনেনি। ঘণ্টাভিত্তিক চার্টে একটি সুস্পষ্ট আপট্রেন্ড লাইন দৃশ্যমান এবং মূল্য এখনো ইচিমোকু ইন্ডিকেটর লাইনের ওপরে অবস্থান করছে। ৪-ঘণ্টার টাইমফ্রেমে চলমান প্রবণতা এতটাই স্পষ্ট যে সেটার জন্য কোনো ব্যাখ্যা দেয়ারও প্রয়োজন নেই। সুতরাং, সামান্য কারেকশনের পর এই পেয়ারের মূল্য আবারও শক্তিশালীভাবে ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে।
ইউরোজোনের পরিষেবা এবং উৎপাদন খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সংক্রান্ত সূচকের ফলাফল দুর্বল ছিল। চারটি প্রধান সূচকের ফলাফলই প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল এবং ৫০.০-এর "গুরুত্বপূর্ণ" স্তরের নিচে নেমে এসেছে। বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সংক্রান্ত সূচকের ফলাফল প্রত্যাশার চেয়ে ইতিবাচক ছিল এবং ৫০.০-এর গুরুত্বপূর্ণ স্তর থেকে আরও বেশি খানিকটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এর ফলে গতকাল প্রকাশিত ছয়টি প্রতিবেদনের ফলাফলই মার্কিন ডলারকে সমর্থন দিয়েছে এবং এটির মূল্য কিছুটা বেড়েছে। তবে মনে রাখতে হবে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে S&P সূচকের তুলনায় ISM থেকে প্রকাশিত ব্যবসায়িক কার্যক্রম সংক্রান্ত সূচকগুলোই বাস্তবিক অর্থে মার্কেটের ট্রেডারদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটিই মার্কেটে বেশি প্রভাব বিস্তার করে।
৫-মিনিটের টাইমফ্রেমে, ইউরোপীয় সেশনে গঠিত দিনের প্রাথমিক সিগনালগুলো ভুল ছিল। এগুলো ঠিক তখনই গঠিত হয় যখন জার্মানি ও ইউরোজোন থেকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সংক্রান্ত সূচকগুলো প্রকাশিত হয় এবং পেয়ারটির মূল্য 1.1321 লেভেলের কাছে পৌঁছায়, যার ফলে অস্থিরতা বেড়ে যায় এবং কোনো নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ছাড়াই এই পেয়ারের মূল্যের মুভমেন্ট পরিলক্ষিত হয়। দিনভর এই পেয়ারের মূল্য ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী হয়েছে, তবে শুরুর দিকের সেই ভুল সিগনালগুলো ট্রেডারদের সেন্টিমেন্টকে নেতিবাচক করে তুলেছে এবং তাদেরকে ইউরোর পজিশন নিতে নিরুৎসাহিত করেছে।
সর্বশেষ কমিটমেন্ট অব ট্রেডার্স (COT) রিপোর্ট ১৩ মে প্রকাশিত হয়েছে। উপরের চার্ট অনুযায়ী, নন-কমার্শিয়াল ট্রেডারদের নেট পজিশনের সংখ্যা দীর্ঘদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বিক্রেতারা অল্প সময়ের জন্য মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল, তবে দ্রুত তা হারিয়ে ফেলে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলারের দরপতন হচ্ছে। যদিও বলা যাচ্ছে না এই প্রবণতা কতদিন চলবে, তবুও COT রিপোর্ট বড় ট্রেডারদের মানসিকতা প্রতিফলিত করে—যদিও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই মানসিকতা দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে।
ইউরোর পক্ষে এমন কোনো মৌলিক কারণ নেই যা এটিকে শক্তিশালী করতে পারে, তবে ডলারের উপর অনেক বেশি রাজনৈতিক চাপ বিরাজ করছে। আরও কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে EUR/USD পেয়ারের মূল্যের কারেকশন চলমান থাকতে পারে, তবে গত ১৬ বছরের দীর্ঘমেয়াদী নিম্নমুখী প্রবণতা এত সহজে বদলাবে না। একবার ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ শেষ হলে, পুনরায় ডলারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হতে পারে।
COT চার্টে লাল ও নীল লাইন আবারও একে অপরকে অতিক্রম করেছে, যা একটি নতুন বুলিশ প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। সর্বশেষ সাপ্তাহিক রিপোর্ট অনুযায়ী, নন-কমার্শিয়াল ট্রেডারদের লং পজিশনের সংখ্যা 15,400টি বেড়েছে, আর শর্ট পজিশনের সংখ্যা বেড়েছে 6,300টি। ফলে নেট পজিশনের সংখ্যা 9,000 কন্ট্রাক্ট বেড়ে গেছে।
ঘণ্টাভিত্তিক চার্টে আবারও EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার শুরু হওয়ার প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে এবং ইচিমোকু লাইনের ওপরে কনসোলিডেশন হয়েছে। মার্কিন ডলারের মূল্যের গতিপথ এখনো বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। যদি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং শুল্ক কমানো হয়, তাহলে ডলারের দর বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে ডলারের মূল্য স্থায়ীভাবে ঊর্ধ্বমুখী হতে হলে অবশ্যই ইচিমোকু লাইন এবং ট্রেন্ডলাইনের নিচে কনসোলিডেশন ঘটতে হবে। ডলারের মূল্যের কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, তা খুব বেশি নয়—কারণ ট্রেডাররা এখনো "ট্রাম্পের মুদ্রা" থেকে দূরে থাকতে চায় এবং কেবল সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে ডলার ক্রয় করছে।
২৩ মে ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লেভেলগুলো হচ্ছে: 1.0823, 1.0886, 1.0949, 1.1006, 1.1092, 1.1147, 1.1185, 1.1234, 1.1274, 1.1362, 1.1426, 1.1534, সেইসাথে সেনকৌ স্প্যান বি – 1.1224, কিজুন-সেন লাইন – 1.1247 রয়েছে। ইচিমোকু ইন্ডিকেটর লাইনগুলো দিনভর অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে, তাই সিগনাল নির্ধারণের সময় এই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত। মূল্য সঠিক দিকে ১৫ পিপস মুভমেন্ট প্রদর্শন করলে ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করতে ভুলবেন না, যাতে ভুল সিগনালের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য লোকসান এড়ানো যায়।
ইউরোজোন বা যুক্তরাষ্ট্রে শুক্রবার কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনের প্রকাশনা বা ইভেন্ট নির্ধারিত নেই, তাই ডলারের মূল্য বৃদ্ধির জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো কারণও নেই। শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার খাতিরে সেনকৌ স্প্যান বি এবং কিজুন-সেন লাইনের দিকে সামান্য কারেকশন দেখা যেতে পারে, তবে আমরা এই পেয়ারের মূল্যের বড় ধরনের ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্টের আশা করছি না— যদি না হোয়াইট হাউস থেকে নতুন কোনো চমকপ্রদ খবর আসে।