আরও দেখুন
শুক্রবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সাথে EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের ট্রেড করা হয়েছে। টানা দুই সপ্তাহ ধরে ডলার দরপতন হচ্ছে, এবং মার্কেটে বছরের শুরুতে শুরু হওয়া ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আবার শুরু হওয়ার এক অবিরাম আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মার্কেটের ট্রেডাররা এখনো এই প্রবণতা পরিবর্তনের কোনো কারণ বা প্রেরণা খুঁজে পাচ্ছে না। কয়েক সপ্তাহ ধরে আসা তথ্যসূত্রগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে ট্রাম্প কর্তৃক শুরু হওয়া বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ হয়তো আরও শান্তিপূর্ণ ও নমনীয় পর্যায়ে রূপ নিতে পারে। তবে গত সপ্তাহে এটি যে ভুল অনুমান ছিল, তা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
ট্রাম্প আবারও বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছেন। তিনি এখন বিশ্বব্যাপী হুয়াইয়ের চিপ ব্যবহার বাড়ায় অসন্তুষ্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ (আসলে আমেরিকা কি সত্যিই অগ্রগতির জন্য কিছু করছে?), এবং অ্যাপলের উৎপাদন কার্যক্রম আমেরিকায় ফেরত নিয়ে আসতে অনীহায় অসন্তুষ্ট। এর ফলস্বরূপ, আমরা নতুন শুল্ক, নিষেধাজ্ঞা এবং হুমকির সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। ট্রেডাররাও সেভাবেই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে — তারা ডলার বিক্রি করছে, যা বর্তমানে কেউই কিনতে চাচ্ছে না। অচিরেই ট্রাম্প হয়তো বিশ্বকে আদেশ করতে শুরু করবেন যেন তারা ডলারকে আন্তর্জাতিক লেনদেনের মাধ্যম ও "নিরাপদ বিনিয়োগ" হিসেবে ত্যাগ না করে। এরপর হয়তো তিনি বাণিজ্য চুক্তিতে মার্কিন বন্ড কিনে নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেবেন। তারপর কি? ট্রাম্প কি এবার প্রতিটি দেশকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সংলাপ বজায় রাখতে কত টাকা দিতে হবে তাও বলে দেবেন?
শুক্রবার কোনো প্রকার মৌলিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি, তবে নতুন শুল্ক সংক্রান্ত সংবাদ শিরোনামগুলো যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। ৫ মিনিটের চার্টে গঠিত ট্রেডিং সিগন্যালগুলোকে আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না, কারণ দিনের শুরুতেই বাণিজ্য যুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সমাধান ব্যর্থ হওয়ার নতুন লক্ষণ মার্কেটে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এর ফলে, ডলার আবারও দুর্বল হয়, তবে এই পেয়ারের মূল্যের বিশৃঙ্খল, অস্থির এবং এলোমেলো ধরনের ওঠানামা পরিলক্ষিত হয়েছে।
সর্বশেষ COT রিপোর্ট ২০ মে প্রকাশিত হয়েছিল। উপরের চার্টে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে, নন-কমার্শিয়াল ট্রেডারদের নেট পজিশনের সংখ্যা দীর্ঘ সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ২০২৪ সালের শেষে কিছু সময়ের জন্য বিক্রেতারা মার্কেটে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল, কিন্তু তারা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ডলারের মূল্য নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। আমরা ১০০% নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি না যে ডলারের দরপতন চলতেই থাকবে, তবে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইউরোর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার পক্ষে কোনো মৌলিক কারণ নেই; তবে ডলারের দরপতন হওয়ার জন্য একটি বড় কারণ রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে এই পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা এখনো বিদ্যমান, যদিও এই মুহূর্তে "প্রবণতা" শব্দের প্রভাবই বা কী? ট্রাম্প যদি বাণিজ্য যুদ্ধের যবনিকা টানেন, তবে ডলার আবারও শক্তিশালী হতে পারে, কিন্তু আদৌ কি তিনি তা করবেন?
লাল এবং নীল লাইনগুলো আবারও একে অপরকে অতিক্রম করেছে, যা মার্কেটে নতুন করে এই পেয়ারের মূল্যের বুলিশ প্রবণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সর্বশেষ সাপ্তাহিক রিপোর্ট অনুযায়ী, "নন-কমার্শিয়াল" ট্রেডারদের লং পজিশনের সংখ্যা 3,500 কমেছে, এবং শর্ট পজিশনের সংখ্যা 6,800 বেড়েছে। ফলস্বরূপ, নিট পজিশনের সংখ্যা 10,300 কমেছে। তবে, COT রিপোর্টগুলো এক সপ্তাহ পরে প্রকাশিত হয়। এখন আবারও মার্কেটের ট্রেডাররা সক্রিয়ভাবে এই পেয়ার ক্রয় করছে।
ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে EUR/USD পেয়ারের মূল্যের নতুন স্বল্পমেয়াদি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে। ডলারের মূল্যের ভবিষ্যৎ মুভমেন্ট এখনো বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধের অগ্রগতির ওপর নির্ভর করছে। যদি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং শুল্ক হ্রাস পায়, তাহলে ডলারের দর বৃদ্ধি শুরু হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে শুল্ক বাড়ছে এবং শান্তিপূর্ণ চুক্তির কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। ডলারের পুনরুদ্ধারের জন্য ইচিমোকু লাইন ও ট্রেন্ডলাইনের ব্রেকডাউন হয়ে এই পেয়ারের মূল্যের নিচের দিকে যাওয়া প্রয়োজন। মার্কেটের ট্রেডাররা এখনো "ট্রাম্পের মুদ্রা" থেকে দূরে থাকার পথই বেছে নিচ্ছে, এমনকি এটি বিবেচনায় রাখার কারণ থাকলেও।
২৬ মে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেডিং লেভেলগুলো হলো 1.0823, 1.0886, 1.0949, 1.1006, 1.1092, 1.1147, 1.1185, 1.1234, 1.1274, 1.1362, 1.1426, 1.1534, 1.1607, এবং সেইসাথে সেনকৌ স্প্যান বি লাইন (1.1224) ও কিজুন-সেন লাইন (1.1297) রয়েছে। ইচিমোকু ইনডিকেটরের লাইনগুলো দিনের বেলায় অবস্থান পরিবর্তিত হতে করতে পারে এবং ট্রেডিং সিগন্যাল নির্ধারণের সময় তা বিবেচনায় রাখতে হবে। মনে রাখবেন, যখন মূল্য আপনার অনুকূলে ১৫ পিপস অগ্রসর হয়, তখন ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করতে ভুলবেন না — কারণ এটি ভুল সিগন্যালের ক্ষেত্রে ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।
সোমবার নির্ধারিত একমাত্র ইভেন্ট হিসেবে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দের বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হবে। এর বাইরে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট প্রত্যাশিত নয়। কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারেন আজকের দিনটি শান্ত থাকবে, কিন্তু মার্কেটের ট্রেডাররা আবারও ডলার থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে চাচ্ছে। লাগার্দের বক্তৃতা নিয়ে বলতে গেলে — বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি আদৌ কোনো পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে? ইসিবি টানা আটটি বৈঠকে সুদের হার কমিয়েছে, তবুও ইউরোর কোনো সমস্যা দেখা যাচ্ছে না।