আরও দেখুন
১ জুন থেকে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০% পর্যন্ত বাড়ানো হবে ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর সোমবার দিনের শুরুতে EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হয়। তবে, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েনের সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাম্প শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পিছিয়ে ৯ জুলাই করার ঘোষণা দিলে, এই পেয়ারটি পরে আবারও দরপতনের মুখে পড়ে। ট্রাম্প ও ভন ডার লায়েনের ভাষ্যমতে, কার্যকর আলোচনা ও সমঝোতায় পৌঁছাতে পাঁচ সপ্তাহই যথেষ্ট সময়। আমাদের মতে, "সমঝোতা" মানেই যে ইতিবাচক কিছু হবে তা নয় — তবে এক মাস দেড় মাসের মধ্যে বোঝা যাবে, আদৌ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে কোনো বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব কি না।
এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ইইউ সহজে চাপের মধ্যে পড়তে চাচ্ছে না, তবে তুলনামূলকভাবে নমনীয় অবস্থান বজায় রেখেছে। ইউরোপ ট্রাম্পের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং তার শক্তিশালী অবস্থানের স্বীকৃতিও তারা দিয়েছে। তবে, ইউরোপ যেকোনো শর্ত মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। সুতরাং আলোচনায় মতৈক্যে পৌঁছানো কঠিন হবে বলেই ধরে নেওয়া যায়, কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সমস্যা হলো, এই আলোচনার প্রায় কোনো তথ্যই গণমাধ্যমে আসছে না, তাই পরবর্তী দেড় মাস মার্কেটের ট্রেডাররা শুধু অনুমানই করে যাবে আলোচনা কতটা অগ্রসর হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি ডলারের মূল্যের আরও অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ট্রেডাররা বারবার নতুন করে ডলারের শর্ট পজিশন ওপেন করছে, আবার ট্রাম্পের হঠাৎ মত পরিবর্তনের কারণে পরদিনই তা ক্লোজ করতে বাধ্য হচ্ছে — এসব করতে করতে তারা ক্লান্তি বোধ করছে। কেউ কেউ শর্ট পজিশন ক্লোজ করছে না — আবার সবাই সবসময় করছে না। এমনকি মৌলিক কোনো কারণ ছাড়াও মার্কিন ডলার এখনো প্রবল চাপের মুখে রয়েছে।
সোমবারের ট্রেডিং সিগন্যালের বিষয়ে বলতে গেলে — তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু দেখা যায়নি। এই পেয়ারের মূল্য কোনো লেভেল বা লাইন টেস্ট করেনি। ইউরোপীয় সেশনে মূল্য 1.1426 লেভেলের খুব কাছাকাছি এসেছিল, তবে সেখানে পৌঁছায়নি।
সর্বশেষ COT রিপোর্ট ২০ মে প্রকাশিত হয়েছিল। উপরের চার্টে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে, নন-কমার্শিয়াল ট্রেডারদের নেট পজিশনের সংখ্যা দীর্ঘ সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ২০২৪ সালের শেষে কিছু সময়ের জন্য বিক্রেতারা মার্কেটে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল, কিন্তু তারা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ডলারের মূল্য নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। আমরা ১০০% নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি না যে ডলারের দরপতন চলতেই থাকবে, তবে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইউরোর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার পক্ষে কোনো মৌলিক কারণ নেই; তবে ডলারের দরপতন হওয়ার জন্য একটি বড় কারণ রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে এই পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা এখনো বিদ্যমান, যদিও এই মুহূর্তে "প্রবণতা" শব্দের প্রভাবই বা কী? ট্রাম্প যদি বাণিজ্য যুদ্ধের যবনিকা টানেন, তবে ডলার আবারও শক্তিশালী হতে পারে, কিন্তু আদৌ কি তিনি তা করবেন?
লাল এবং নীল লাইনগুলো আবারও একে অপরকে অতিক্রম করেছে, যা মার্কেটে নতুন করে এই পেয়ারের মূল্যের বুলিশ প্রবণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সর্বশেষ সাপ্তাহিক রিপোর্ট অনুযায়ী, "নন-কমার্শিয়াল" ট্রেডারদের লং পজিশনের সংখ্যা 3,500 কমেছে, এবং শর্ট পজিশনের সংখ্যা 6,800 বেড়েছে। ফলস্বরূপ, নিট পজিশনের সংখ্যা 10,300 কমেছে। তবে, COT রিপোর্টগুলো এক সপ্তাহ পরে প্রকাশিত হয়। এখন আবারও মার্কেটের ট্রেডাররা সক্রিয়ভাবে এই পেয়ার ক্রয় করছে।
ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে EUR/USD পেয়ারের মূল্যের নতুন স্বল্পমেয়াদি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। মার্কিন ডলারের মূল্যের ভবিষ্যৎ মুভমেন্ট এখনো সম্পূর্ণভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ সংক্রান্ত পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। যদি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং শুল্ক হ্রাস পায়, তাহলে ডলার পুনরুদ্ধারের সুযোগ পাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো শান্তিপূর্ণ সমঝোতার আভাস নেই। ট্রাম্প এখনো অস্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন ও বিস্ময়কর মন্তব্য করে যাচ্ছেন, যা মার্কেটের ট্রেডারদেরকে হতবাক করে দিচ্ছে। ট্রেডাররা এখন সবচেয়ে নেতিবাচক ফলাফলের আশঙ্কা করছে এবং ট্রাম্পের ওপর আস্থা হারিয়েছে। যখন ট্রেন্ডলাইন ও ইচিমোকু ইন্ডিকেটরের ব্রেকআউটের ঘটে এই পেয়ারের মূল্য নিম্নমুখী হবে আমরা তখনই ধরে নিতে পারব যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শেষ হয়েছে।
২৭ মে ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লেভেলগুলো হলো: 1.0823, 1.0886, 1.0949, 1.1006, 1.1092, 1.1147, 1.1185, 1.1234, 1.1274, 1.1362, 1.1426, 1.1534, 1.1607। সেইসাথে সেনকৌ স্প্যান বি লাইন (1.1214) এবং কিজুন-সেন লাইন (1.1322) রয়েছে। দিনের বেলায় ইচিমোকু লাইনের অবস্থান পরিবর্তিত হতে পারে, তাই সিগন্যাল বিশ্লেষণের সময় তা অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। যখন মূল্য আপনার অনুকূলে ১৫ পিপস অগ্রসর হয়, তখন ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করতে ভুলবেন না — কারণ এটি ভুল সিগন্যাল থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
মঙ্গলবার ইউরোজোনে কোনো উল্লেখযোগ্য ইভেন্ট বা প্রতিবেদন নির্ধারিত নেই। যুক্তরাষ্ট্রে ডিউরেবল গুডস অর্ডার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, তবে এটির ফলাফল ডলারকে সহায়তা করতে পারবে এমন সম্ভাবনা নেই। সবোর্চ্চ মার্কিন গ্রিনব্যাকের দর ৪০–৫০ পিপস পর্যন্ত সাময়িকভাবে বাড়তে পারে, তবে ডলারের মূল্যের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা এখনো ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করছে।