আরও দেখুন
বৃহস্পতিবার রাতের দিকে EUR/USD পেয়ার তীব্র দরপতনের শিকার হয়, তবে দিনের বাকি সময়জুড়ে এই পেয়ারের মূল্য তিনগুণ বেশি শক্তিশালীভাবে ঊর্ধ্বমুখী রিবাউন্ড করে। রাতের বেলা এই পেয়ারের মূল্যের এই দিক পরিবর্তনের একমাত্র কারণ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা: ইউএস কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত প্রায় সব শুল্ক বাতিল করে দেয়, এগুলোকে "ক্ষমতার অপব্যবহার" আখ্যা দিয়ে অবৈধ ঘোষণা করে এবং ১২টি ডেমোক্র্যাটিক অঙ্গরাজ্য ও একাধিক বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার পক্ষে রায় দেয়। প্রত্যাশিতভাবেই ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন, আপিল করার ঘোষণা দেন এবং বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা জানান।
ডলারের মূল্য কেন রাতারাতি বৃদ্ধির পেলো? কারণ যদি শুল্ক বাতিল হয়ে থাকে, তাহলে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ডলারের যে দরপতন ঘটেছিল, সেটির সম্ভবত সমাপ্তি ঘটেছে — মার্কেটের ট্রেডাররা এমনটাই ধরে নিয়েছে।
তবে দিনের দ্বিতীয়ার্ধে ডলার কেন আবার দরপতনের শিকার হল? কারণ ট্রেডাররা এখনও অধিকাংশ খবরকে ডলারের জন্য নেতিবাচক হিসেবে ব্যাখ্যা করছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর আস্থা রাখতে পারছে না, রিপাবলিকান প্রশাসনের অধীনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আস্থা রাখছে না, এবং বর্তমান সরকারের ওপর সার্বিকভাবে আস্থা হারিয়েছে।
এর বাইরে, যেহেতু ট্রাম্প তার শুল্কের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, তাই ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে যে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কোর্টের রায় উল্টে দিতে সক্ষম হবেন। অর্থাৎ, বাণিজ্যযুদ্ধ এখনো সত্যিকার অর্থে নিষ্পত্তি হয়নি। আদালত কেবল শুল্ক স্থগিত করেছে, কিন্তু যতক্ষণ না ট্রাম্প নিজে তা পুরোপুরি পরিত্যাগ করেন — যা তিনি করবেন না — পরিস্থিতির বাস্তবিক পরিবর্তন ঘটবে না।
৫ মিনিটের টাইমফ্রেমে বৃহস্পতিবারের ট্রেডিং সিগন্যালগুলো চমৎকার ছিল। ইউরোপীয় সেশনের শুরুতে মূল্য 1.1234 লেভেল থেকে রিবাউন্ড করে এবং সারাদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। দিনের শেষে মূল্য 1.1362 লেভেল অতিক্রম করে, যেখানে লং পজিশন ক্লোজ করা যেত। সারাদিনে কোনো সেল সিগন্যাল গঠিত হয়নি। সর্বনিম্ন প্রায় ১২০ পিপস লাভ করা যেত।
সর্বশেষ COT রিপোর্ট ২০ মে প্রকাশিত হয়েছিল। উপরের চার্টে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে, নন-কমার্শিয়াল ট্রেডারদের নেট পজিশনের সংখ্যা দীর্ঘ সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ২০২৪ সালের শেষে কিছু সময়ের জন্য বিক্রেতারা মার্কেটে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল, কিন্তু তারা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ডলারের মূল্য নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। আমরা ১০০% নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি না যে ডলারের দরপতন চলতেই থাকবে, তবে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইউরোর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার পক্ষে কোনো মৌলিক কারণ নেই; তবে ডলারের দরপতন হওয়ার জন্য একটি বড় কারণ রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে এই পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা এখনো বিদ্যমান, যদিও এই মুহূর্তে "প্রবণতা" শব্দের প্রভাবই বা কী? ট্রাম্প যদি বাণিজ্য যুদ্ধের যবনিকা টানেন, তবে ডলার আবারও শক্তিশালী হতে পারে, কিন্তু আদৌ কি তিনি তা করবেন?
লাল এবং নীল লাইনগুলো আবারও একে অপরকে অতিক্রম করেছে, যা মার্কেটে নতুন করে এই পেয়ারের মূল্যের বুলিশ প্রবণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সর্বশেষ সাপ্তাহিক রিপোর্ট অনুযায়ী, "নন-কমার্শিয়াল" ট্রেডারদের লং পজিশনের সংখ্যা 3,500 কমেছে, এবং শর্ট পজিশনের সংখ্যা 6,800 বেড়েছে। ফলস্বরূপ, নিট পজিশনের সংখ্যা 10,300 কমেছে। তবে, COT রিপোর্টগুলো এক সপ্তাহ পরে প্রকাশিত হয়। এখন আবারও মার্কেটের ট্রেডাররা সক্রিয়ভাবে এই পেয়ার ক্রয় করছে।
ঘন্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে স্থানীয় পর্যায়ে EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে, যা বিগত চার মাসব্যাপী চলমান একটি বৃহত্তর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার অংশ। ডলারের মূল্যের ভবিষ্যৎ মুভমেন্ট এখনও অনেকাংশেই বৈশ্বিক বাণিজ্য যুদ্ধ সংক্রান্ত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। যদি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং শুল্ক হ্রাস পায়, তবে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বর্তমানে কোনো শান্তিচুক্তি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ট্রাম্প এখনও অদ্ভুত সিদ্ধান্ত ও বিস্ময়কর বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন, আর ট্রেডাররা সর্বোচ্চ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকছে এবং ট্রাম্পের ওপর কোনো আস্থা রাখছে না। এমনকি আদালতের বাধ্যতামূলক শুল্ক বাতিলও ডলারকে রক্ষা করতে পারেনি।
৩০ মে ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লেভেলগুলো হল: 1.0823, 1.0886, 1.0949, 1.1006, 1.1092, 1.1147, 1.1185, 1.1234, 1.1274, 1.1362, 1.1426, 1.1534, 1.1607; এছাড়া সেনকৌ স্প্যান বি লাইন (1.1214) এবং কিজুন-সেন লাইন (1.1315) রয়েছে। ইচিমোকু সূচকের লাইনগুলোর অবস্থান দিনব্যাপী পরিবর্তিত হতে পারে, তাই ট্রেডিং সিগন্যাল নির্ধারণের সময় তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত। মূল্য সঠিক দিকে ১৫ পিপস অগ্রসর হলে ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করতে ভুলবেন না — এটি ভুল সিগন্যালের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
আজ ইউরোজোনে জার্মানির খুচরা বিক্রয় ও মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। এই প্রতিবেদনগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। যুক্তরাষ্ট্রে পারসোনাল কনজাম্পশন এক্সপেন্ডিচার (PCE) প্রাইস ইনডেক্স, ব্যক্তিগত আয় ও ব্যয়ের তথ্য, এবং মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কনজিমার সেন্টিমেন্ট ইনডেক্স বা ভোক্তা মনোভাব সূচক প্রকাশিত হবে। এই প্রতিবেদনগুলোও খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।