আরও দেখুন
সাম্প্রতিক নিয়মিত ট্রেডিং সেশনে মার্কিন ইকুইটি সূচকগুলোতে মিশ্র ফলাফলের সাথে লেনদেন শেষ হয়েছে। S&P 500 সূচক 0.01% হ্রাস পেয়েছে, নাসডাক 100 সূচক 0.32% হ্রাস পেয়েছে, আর শিল্পভিত্তিক ডাও জোন্স সূচক 0.13% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
আজ মার্কিন ইকুইটি ফিউচারের পাশাপাশি এশিয়ান স্টক সূচকগুলো নিম্নমুখী হয়েছে, কারণ বাণিজ্য উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ থেকে পিছু হটেছে। নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে স্বর্ণের দাম বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ, প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞা এবং ভূরাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিভাজন আরও গভীর হওয়ায় মার্কেটে প্রবল অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন যে দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্য দ্বন্দ্ব বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে এবং কর্পোরেট আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের আরও রক্ষণাত্নকভাবে বিনিয়োগ বণ্টন করতে বাধ্য করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে উচ্চ সুদের হারের দীর্ঘস্থায়ীত্বের আশঙ্কা। এই সমস্ত উপাদান একত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হতে এবং পোর্টফোলিও থেকে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ কমাতে বাধ্য করছে।
ঐতিহ্যগতভাবে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত স্বর্ণের বেড়ে চলেছে—যা বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষামূলক বিনিয়োগ চাহিদা বৃদ্ধির স্পষ্ট ইঙ্গিত।
S&P 500 ফিউচার 0.6% কমেছে, এবং ইউরোপীয় ফিউচার কন্ট্রাক্টগুলো 0.5% হ্রাস পেয়েছে। গত সপ্তাহের শেষদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একে অপরের বিরুদ্ধে বাণিজ্য চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিল, যার ফলে হংকংয়ের স্টক মার্কেটে 1.7% পতন ঘটে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও ঘোষণা দেন যে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করা হবে। ১০-বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের ইয়েল্ড দুই বেসিস পয়েন্ট বেড়ে 4.42%-এ পৌঁছেছে। ডলারের দর 0.2% কমেছে, এবং ইয়েন শক্তিশালী হয়েছে। অপরদিকে, ভূরাজনৈতিক ও বাণিজ্য ঝুঁকি বেড়ে যাওয়াইয় এবং OPEC+ কর্তৃক প্রত্যাশার তুলনায় কম উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে তেলের দাম 2.8% বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্পের শতবর্ষের মধ্যে রেকর্ড সর্বোচ্চ আমদানি শুল্ক নিয়ে সাম্প্রতিক আইনি বিরোধের পর আবারও সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে শুল্ক ইস্যু, যা বিনিয়োগকারীদের মতে যুক্তরাষ্ট্রকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির অনিশ্চয়তা এবং চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা প্রক্রিয়া চলমান থাকার পাশাপাশি, মার্কেটের ট্রেডাররা এখন একটি সম্ভাব্য কর বিলের দিকে নজর রাখছেন, যা মার্কিন বাজেট ঘাটতি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ইনভেস্কো অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের অর্থনীতিবিদ ডেভিড চাও-এর মতে, বর্তমান বিনিয়োগ পরিবেশ এখনো শুল্ক-ভিত্তিক উত্তেজনার ওঠানামা এবং সংশ্লিষ্ট চাপ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। ট্রেডাররা এই পরিবর্তনশীল গতিপ্রবাহ অনুযায়ী নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
গত সপ্তাহের শেষ দিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে চীন জেনেভায় স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বেশিরভাগ অংশই লঙ্ঘন করেছে। সোমবার, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কঠোর বিবৃতিতে ট্রাম্পের অভিযোগের নিন্দা জানিয়ে জানায়, তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এই পদক্ষেপের ফলে শীর্ষ পর্যায়ে ফোনালাপের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ে—দ্বিপাক্ষিক আলোচনা পুনরায় শুরু করার লক্ষ্যে যার জন্য ট্রাম্প চাপ দিয়ে আসছিলেন।
এই বিরোধ বাণিজ্য সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার হুমকি সৃষ্টি করেছে, যদিও ট্রাম্প আশাবাদ প্রকাশ করেছেন যে শিগগিরই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার কথোপকথন হতে পারে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই সপ্তাহের মধ্যেই এই ফোনালাপ হতে পারে।
S&P 500-এর টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
আজ ক্রেতাদের মূল লক্ষ্য হবে $5,877 রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করা। মূল্য এই লেভেল অতিক্রম করতে পারলে আরও ঊর্ধ্বমুখী মোমেন্টাম পাওয়া যাবে এবং মূল্য $5,897-এর দিকে ধাবিত হতে পারে। ক্রেতাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো $5,921 লেভেলের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা, যা ঊর্ধ্বমুখী মোমেন্টামকে শক্তিশালী করবে। যদি ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা হ্রাস পায় এবং দরপতন হতে শুরু করে, তাহলে ক্রেতাদের মূল্য $5,854-এর কাছাকাছি এরিয়ায় থাকা অবস্থায় সক্রিয় হতে হবে। এই লেভেল ব্রেক হয়ে গেলে সূচকটি দ্রুত $5,833 এবং সম্ভবত $5,812-এর দিকেও নেমে যেতে পারে।