মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা জবাব দিয়ে কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইরান, যা প্রতিশোধ ও সংঘাতে নিজেদের প্রস্তুতির স্পষ্ট বার্তা বহন করে। তবে, মার্কেটের ট্রেডাররা এক অদ্ভুত কিন্তু যৌক্তিক পন্থায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। আসুন এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করি।
যেমন কবি বলেছিলেন, "পৃথিবী একটি রঙ্গমঞ্চ, আর নারী-পুরুষ সবাই কেবল অভিনয় করে।" এই ভাবনাটি বর্তমান বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহে প্রয়োগ করলে বলা যায়, "পুরো বিশ্ব একটি রঙ্গমঞ্চ, আর দেশগুলো সেই মঞ্চের অভিনেতা।" শেক্সপিয়রের এই মূল বক্তব্যটি সাম্প্রতিক দশকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রকৃতিকে বিশেষভাবে তুলে ধরে, বিশেষ করে মার্কিন প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে, যাদের আচরণ যেন এক অন্তহীন নাটকের অংশ। আমেরিকার রাজনীতির বিশেষত্ব হলো, সরকারকে একের পর এক "বিজয়" অর্জন করতে হয়। তা না হলে, সরকার প্রতিস্থাপনের ঝুঁকিতে পড়ে — যেখানে প্রতিযোগীরাও ঠিক একই ধরনের নাটকীয়তার আবহে কাজ করে, চুক্তি, প্রতারণা এবং নাটকীয় অঙ্গভঙ্গির মাঝে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র — যার প্রতিনিধিত্ব করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট — যখন মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে নিরপেক্ষতার মুখোশ খুলে ফেলে এবং প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পাশে অবস্থান নেয়, তখন তারা ইরানে পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। ট্রাম্প এই ঘটনাকে ভোটারদের কাছে আরেকটি "বিজয়" হিসেবে উপস্থাপন করেন, যদিও বাস্তবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর পাল্টা জবাবে, তেহরান কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় — যা ছিল সম্পূর্ণ ফাঁকা এবং এতে উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে স্পষ্টভাবে বলা যায়, পুরো ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল। বাস্তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান কেউই যুদ্ধ চায় না — আর তাই উভয় পক্ষের পদক্ষেপ ছিল দৃশ্যত নাটকীয়।
আধুনিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেখানে সবকিছুই অনেকটা 'দেখানোর জন্য', সেখানে মার্কেটের ট্রেডাররা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা দেখা যাক। তাদের প্রতিক্রিয়াও পূর্বানুমেয় ছিল। মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা তেহরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়াকে তুলনামূলকভাবে কম ক্ষতিকর হিসেবে দেখেছে। ইরানের আগের হুমকি — যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের জবাবে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়া — বাস্তবে ফাঁকা বুলি হিসেবেই প্রমাণিত হয়েছে।
এ কারণেই সোমবার অপরিশোধিত তেলের মূল্য 7%-এর বেশি হ্রাস পেয়েছে, এবং আজও এটি 2% এর বেশি হ্রাস পাচ্ছে। ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহ্বান এই বিয়ারিশ প্রবণতাকে আরও জোরালো করেছে। বর্তমানে তেলের মূল্য এমনকি সেই লেভেলেরও নিচে নেমে গেছে, যা সংঘাত শুরুর আগে ছিল।
মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিকে বিনিয়োগকারীরা আলোচনার সূচনা এবং সংঘাতের তীব্রতা হ্রাসের রূপান্তরের সূচক হিসেবে দেখেছে। ইসরায়েল বর্তমানে বড় আকারের হামলার জন্য গতি হারিয়েছে, এবং ইরানের সক্ষমতাও সীমিত। যুদ্ধবিরতির আশা তৈরি হওয়ায় মার্কিন ডলার আবারও চাপের মুখে পড়েছে এবং স্পষ্টতই স্বর্ণের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রশমন নির্দেশ করে।
এই ভূ-রাজনৈতিক "নাটকীয়তা" ইকুইটি মার্কেটে আগ্রহ বাড়িয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্টক সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। যদিও যুদ্ধবিরতি দীর্ঘমেয়াদে কোনো স্থায়ী সমাধান নিয়ে আসবে না — কারণ জাতীয় স্বার্থের মধ্যে ফারাক রয়েছে — বিনিয়োগকারীরা এই মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে ক্রয় সুযোগ নিচ্ছে।
আজ মার্কেট থেকে কী প্রত্যাশা করা যায়? মধ্যপ্রাচ্যের সংকট এবং সম্ভাব্য আলোচনার সূচনা আজও মূল মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে, যা স্টক ও ক্রিপ্টোকারেন্সির চাহিদাকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। অন্যদিকে, ডলার, স্বর্ণ এবং অপরিশোধিত তেল চাপের মধ্যে থাকতে পারে।
দৈনিক পূর্বাভাস
স্বর্ণ মধ্যপ্রাচ্য সংকটে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে স্বর্ণের দ্রুত দরপতন ঘটছে। এই প্রেক্ষাপটে মূল্য 3278.50-এর লেভেলে পৌঁছানোর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। স্বর্ণ বিক্রয়ের জন্য সম্ভাব্য লেভেল হিসেবে 3370.42-এর লেভেল বিবেচনা করা যেতে পারে।
বিটকয়েন মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ায় এবং মার্কিন ডলারের দরপতনের মধ্যে বিটকয়েনের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিটকয়েনের মূল্য 105,746.00-এর লেভেল অতিক্রম করার পর, ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকলে মূল্য 108,713.40-এর উপরের সীমানার দিকে যেতে পারে। বিটকয়েন ক্রয়ের জন্য সম্ভাব্যলেভেল হিসেবে 106,089-এর লেভেল বিবেচনা করা যেতে পারে।
You have already liked this post today
*এখানে পোস্ট করা মার্কেট বিশ্লেষণ আপনার সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রদান করা হয়, ট্রেড করার নির্দেশনা প্রদানের জন্য প্রদান করা হয় না।