আরও দেখুন
যখন মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোর মূল্যের কারেকশন হচ্ছে, তখন অর্থনীতিবিদদের একটি জরিপে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) ডিসেম্বর পর্যন্ত চূড়ান্ত সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দিতে পারে।
অধিকাংশ উত্তরদাতা এখনও আশা করছেন যে ইসিবি আগামী সপ্তাহের বৈঠকে বিরতি নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট হ্রাস করে 1.75%-এ নামিয়ে আনবে। একই সময়ে, অন্যান্য অর্থনীতিবিদের ধারণা, ইসিবি তিনটি বৈঠকে সুদের হার হ্রাস এড়িয়ে যেতে পারে, যতক্ষণ না পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা এটি বোঝে যে সুদের হার সর্বনিম্ন সীমায় পৌঁছে গেছে—এটি পূর্ববর্তী প্রত্যাশার চেয়েও দীর্ঘ বিরতি, যার মূল কারণ ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে সৃষ্টি অনিশ্চয়তা।
তবে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদের প্রত্যাশামাফিক ইসিবির সুদের হার সংক্রান্ত পদক্ষেপে বিরতি এটিই নির্দেশ করে যে, ভবিষ্যতে আরও সুদের হার হ্রাস করাকে শেষ বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে গৃহীত ব্যবস্থাগুলোর প্রভাব মূল্যায়ন করবে এবং নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ওপর নজর রাখবে। ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা বাজার পরিস্থিতির পূর্বাভাসকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে বাণিজ্য বিবাদ বাড়লে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এই প্রেক্ষাপটে ইসিবি সম্ভবত তাদের মুদ্রানীতি সিদ্ধান্তে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকিকে বিবেচনায় নেবে।
এই মাসে সম্ভাব্য সুদের হার হ্রাসে বিরতির বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডের নেতৃত্বে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, যিনি বলেছেন ইসিবি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত রয়েছে। তবে, নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ঐকমত্য দুর্বল হয়ে পড়ছে।
এক্সিকিউটিভ বোর্ডের সদস্য ইসাবেল স্ন্যাবেল মনে করেন, আরও সুদের হার হ্রাস করা এখনও বেশ বাকি। ফিনল্যান্ডের ওল্লি রেন এবং ফ্রান্সের ফ্রাঁসোয়া ভিলরোয়া দ্য গালো উদ্বিগ্ন যে, মূল্যস্ফীতি হয়তো 2%-এর লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারবে না—বিশেষ করে যদি ডলারের তুলনায় ইউরো আরও শক্তিশালী হয়ে পড়ে।
জুলাইয়ের সিদ্ধান্তটি আপাতদৃষ্টিতে তুলনামূলকভাবে সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ গভর্নিং কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্য সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে অবস্থান নেবেন। তবে, কেউ কেউ এটিকে শুধুমাত্র একটি বিরতি হিসেবে দেখবেন, অন্যরা এটিকে সুদের হার হ্রাসের পদক্ষেপের সমাপ্তি হিসেবেও ব্যাখ্যা করতে পারেন, যা জুলাই পরবর্তী সুদের হারের সম্ভাবনা নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় এক-চতুর্থাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন ইসিবি ইতোমধ্যে তাদের সুদের হার হ্রাস সংক্রান্ত পদক্ষেপের যবনিকা টেনেছে। প্রায় অর্ধেক প্রত্যাশা করছেন সেপ্টেম্বর মাসে চূড়ান্ত সুদের হার কমানো হবে, যেখানে 21% অংশগ্রহণকারী পূর্বাভাস দিচ্ছেন এটি ডিসেম্বর মাসে ঘটবে।
নীতিনির্ধারকদের পদক্ষেপ অনেকটাই নির্ভর করবে ব্রাসেলস ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনার ওপর। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প 30% শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। যতদিন না পর্যন্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে, ততদিন অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে।
বর্তমানে EUR/USD-এর টেকনিক্যাল প্রেক্ষাপট: ক্রেতাদের এখন এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1655 লেভেলে পুনরুদ্ধারের উপায় বের করতে হবে। শুধুমাত্র তখনই 1.1690 লেভেল টেস্টের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা যাবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্য 1.1720 লেভেল পর্যন্ত বাড়তে পারে, যদিও বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া এটি বেশ কঠিন হবে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে 1.1770-এর লেভেল। যদি ইন্সট্রুমেন্টটির দরপতন শুরু হয়, তাহলে আমি আশা করি মূল্য 1.1598 লেভেলের আশেপাশে থাকা অবস্থায় জোরালোভাবে এই পেয়ার ক্রয়ের প্রবণতা দেখা দেবে। যদি মূল্য ঐ লেভেলে থাকা অবস্থায় এই পেয়ারের চাহিদা না থাকে, তাহলে 1.1562-এর নিম্ন লেভেল পুনরায় টেস্ট না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে অথবা 1.1511 থেকে লং পজিশন ওপেন করা যেতে পারে।
GBP/USD-এর টেকনিক্যাল প্রেক্ষাপট: পাউন্ডের ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্যের 1.3442 এর কাছাকাছি রেজিস্ট্যান্স ব্রেক করাতে হবে। কেবল তখনই তারা এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3481-এর দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারবে, যদিও এই লেভেলের ওপরে ওঠা এই পেয়ারের মূল্যের পক্ষে কঠিন হতে পারে। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে 1.3532-এর লেভেল। যদি এই পেয়ারের দরপতন শুরু হয়, তাহলে বিক্রেতারা এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3405-এর লেভেলে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে। মূল্য এই রেঞ্জ ব্রেক করে নিচের দিকে নামলে, ক্রেতাদের অবস্থান গুরুতরভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3368-এর নিম্ন লেভেলের দিকে নেমে যেতে পারে, এমনকি আরও নিচে 1.3336 লেভেল পর্যন্ত নেমে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকবে।