empty
 
 
04.08.2025 10:54 AM
নেতিবাচক অর্থনৈতিক সংবাদের প্রভাবে মার্কেটে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া

গত শুক্রবার, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক নেতিবাচক অর্থনৈতিক আপডেট পান এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানান।

দেশব্যাপী কর্মসংস্থানের তীব্র হ্রাসের তথ্য প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রধানকে বরখাস্ত করেন। একই দিনে, ট্রাম্প ফেডারেল রিজার্ভের উপর নিজের প্রভাব বিস্তারের একটি অপ্রত্যাশিত সুযোগ পান, কারণ ফেডের গভর্নর আদ্রিয়ানা কুগলার তার আসন্ন পদত্যাগের ঘোষণা দেন—যখন বিনিয়োগকারীরা এখনও শ্রম বাজার সম্পর্কিত তথ্য এবং পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনের প্রভাব বিশ্লেষণ করছিলেন। এখন প্রেসিডেন্ট তার উত্তরসূরি নিয়োগ দেবেন, এবং সম্ভবত এমন কাউকে বেছে নেবেন যিনি সুদের হার কমানোর পক্ষে থাকবেন।

This image is no longer relevant

একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে যিনি প্রায়ই মার্কিন অর্থনীতির দৃঢ়তা নিয়ে গর্ব করেন এবং দাবি করেন যে উচ্চ শুল্ক ও কর হ্রাস অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে, তার জন্য শুক্রবারের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ফলাফল ছিল একটি বড় ধাক্কা। প্রতিবেদন দেখা যায়, মহামারির পর এটাই ছিল কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দিক থেকে সবচেয়ে দুর্বল মাস। এই ফলাফল মার্কিন প্রশাসনের ইতিবাচক বার্তার সঙ্গে তীব্রভাবে সাংঘর্ষিক এবং এর মাধ্যমে আর্থিক নীতিমালার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক দিক থেকেও এর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। বিরোধী দল এই তথ্যকে কাজে লাগিয়ে প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক কৌশল নিয়ে সমালোচনা করতে পারে, দাবি করতে পারে যে তা প্রতিশ্রুত ফলাফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা তথ্যগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, এটি সাময়িক বিচ্যুতি নাকি দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতার সূচনা—তা বোঝার জন্য। যদি শ্রম বাজারের এই মন্থরতা অব্যাহত থাকে, তাহলে ফেডারেল রিজার্ভ সম্ভবত তাদের মুদ্রানীতি সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করতে সুদের হার কমানোর গতি বাড়াতে হতে পারে। তবে, এমন পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতিকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে, যা প্রশাসনের জন্য অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে।

শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রধান এরিকা ম্যাকএনটারফারকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, যাকে তিনি রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত করেন—এমনকি ট্রাম্পের নিজের দলের অর্থনীতিবিদরাও এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে ট্রাম্প শুধু পরিসংখ্যান সংস্থার স্বতন্ত্রতার নীতিমালা বোঝেন না, বরং রাজনৈতিক সুবিধার জন্য তথ্যের নিরপেক্ষতাও বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।

দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ম্যাকএনটারফারকে বরখাস্ত করার ফলে সরকারি পরিসংখ্যানের উপর আস্থা নষ্ট হয়েছে এবং এমন একটি বার্তা গিয়েছে যে মার্কিন প্রশাসন তথ্যকে নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষায় কাজে লাগাতে চায়। এর পরিণতি গুরুতর হতে পারে। যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিরপেক্ষ অর্থনৈতিক সূচকের উপর নির্ভর করেন, তারা মার্কিন অর্থনীতির উপর আস্থা হারাতে পারেন, যার ফলে বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপরন্তু, পরিসংখ্যানের প্রতি আস্থা কমে গেলে কার্যকর আর্থিক নীতিমালা তৈরি কঠিন হয়ে পড়বে এবং ভুল সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। দীর্ঘমেয়াদে, পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতি ট্রাম্পের এই আচরণ মার্কিন অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং স্বচ্ছতা ও তথ্যের অখণ্ডতার জন্য নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা নষ্ট করতে পারে।

ফেডারেল রিজার্ভ ও চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের উপর ট্রাম্পের চাপ নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে, কারণ অনেকেই মনে করেন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপহীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকর। এখন মার্কিন পরিসংখ্যান সংস্থাগুলোর উপর ট্রাম্পের চাপ বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের নির্ভরযোগ্যতাকেও হুমকির মুখে ফেলছে—যা ট্রিলিয়ন ডলারের মার্কেটকে প্রভাবিত করতে পারে।

PNC অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের বিশ্লেষকগণ মন্তব্য করেছেন, "শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর (BLS) উপর ট্রাম্পের চাপ মার্কেটে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করছে, কারণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। বিনিয়োগকারীদের এখন সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো: এরপর কী হতে যাচ্ছে? ট্রাম্প কি আবার ফেডের চেয়ারম্যান পাওয়েলকে বরখাস্ত করার হুমকি দেবেন?"

বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
ট্রাম্পের পদক্ষেপ এবং এ সংক্রান্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে মার্কিন ডলারের প্রতিক্রিয়া বেশ স্পষ্ট ছিল।

EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল পূর্বাভাস:
ক্রেতাদের এখন এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1600 রেজিস্ট্যান্স ব্রেক করিয়ে উপরের দিকে নিয়ে যেতে হবে। কেবল তখনই 1.1640 লেভেল টেস্ট করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা গ্রহণযোগ্য হবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্যের 1.1665 পর্যন্ত অগ্রসর হওয়া সম্ভব, তবে বড় ক্রেতাদের সমর্থন ছাড়া এটি অর্জন করা কঠিন হবে। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে 1.1690 এর উচ্চতা। যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যা, তাহলে মূল্য 1.1555 লেভেলে থাকা অবস্থায় উল্লেখযোগ্য ক্রয় কার্যক্রম দেখা যেতে পারে। যদি মূল্য ওই লেভেলে থাকা অবস্থায় ক্রয়ের আগ্রহ না দেখা যায়, তাহলে 1.1518-এর লেভেল রিটেস্টের জন্য অপেক্ষা করা অথবা 1.1479 থেকে লং পজিশনের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

GBP/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল পূর্বাভাস:
পাউন্ড ক্রেতাদের প্রথমে মূল্যের 1.3305-এর রেজিস্ট্যান্স ব্রেক করাতে হবে। তাহলে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.3340-এর দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে, যদিও মূল্যের এই লেভেলের উপরে ওঠা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা 1.3380-এর লেভেলে নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যায়, তাহলে বিক্রেতারা মূল্য 1.3255 লেভেলে থাকা অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। এই রেঞ্জ ব্রেক করলে তা ক্রেতাদের জন্য বড় ধাক্কা হবে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3217 লেভেলের দিকে নামবে, যার পরে মূল্যের 1.3180-এ পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

Recommended Stories

এখন কথা বলতে পারবেন না?
আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন চ্যাট.