আরও দেখুন
চীনা কর্তৃপক্ষের এক বিবৃতির পর ইউরো, পাউন্ড এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, যেখানে তারা জানিয়েছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু করার সম্ভাবনা বিবেচনা করছে — যা ট্রাম্প গত মাসে শুল্ক বাড়ানোর পর দুই পক্ষের মধ্যে সংকট সমাধানের প্রথম বাস্তব অগ্রগতির ইঙ্গিত।
শুক্রবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, "যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা একাধিকবার বেইজিংয়ের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং তারা ওয়াশিংটনকে আন্তরিকতা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।" মন্ত্রণালয়টি আরও জানায়, "যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট পক্ষের মাধ্যমে চীনের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং চীন বর্তমানে বিষয়টি মূল্যায়ন করছে।"
এই বিবৃতি এই ইঙ্গিত দেয় যে, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে অচলাবস্থা এখন অবসানের পথে রয়েছে — এপ্রিল মাসে ট্রাম্প শত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করার পর এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় বেইজিংও পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। ট্রাম্প বারবার বলেছেন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আলোচনার সূচনা করতে হবে। এই সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টও বলেছেন যে, উত্তেজনা প্রশমনের প্রথম পদক্ষেপটি বেইজিংকেই নিতে হবে।
অনেক বিশ্লেষক এই ঘটনাকে "দীর্ঘ খরার পর প্রথম বৃষ্টি" বলে অভিহিত করেছেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে, চীনের শীর্ষ নেতৃত্ব আলোচনার অনুমোদন দিয়েছে। কারা আলোচনা পরিচালনা করবে, কৌশল কী হবে, এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনার ধরন কেমন হবে — এই বিষয়গুলো বর্তমানে আলোচনার মধ্যে রয়েছে, এবং আমরা শিগগিরই আরও বিস্তারিত জানতে পারব।
বেইজিংয়ের আলোচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়েছে — যার কারণে দেশটির সরকার স্থিতিশীলতা চাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ব্যবসায়িক মহলের চাপও বাড়ছে, যারা অনিশ্চয়তা ও উৎপাদন ব্যয়ের বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন নতুন আলোচনাকে চীনের বাণিজ্য নীতিতে প্রভাব বিস্তারের এবং মার্কিন কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষার সুযোগ হিসেবে দেখছে। তবে পূর্বের মতো আবারও এই আলোচনায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। যেভাবেই হোক, নতুন আলোচনার সম্ভাবনা একটি আশার আলো তৈরি করেছে — যে দুই পক্ষ একটি আপসহীন সমাধানে পৌঁছাতে পারবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে পারবে। এজন্য প্রয়োজন হবে উভয় পক্ষের নমনীয়তা ও গঠনমূলক আলোচনার প্রতি আগ্রহ।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে পরিস্থিতি অনেকেই যতটা ভালো ভাবছিলেন, বাস্তবে তা নয়। এই অচলাবস্থার ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে টেনে আনার ক্ষেত্রে গতি সঞ্চার করতে পারে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে, কারণ শুল্ক বাড়ানোর আগেই ব্যাপক আমদানি করা হয়েছিল — যার ফলে বৈশ্বিক ফিনান্সিয়াল মার্কেট অস্থির হয়ে পড়ে এবং ভোক্তা আস্থার পতন ঘটে।
চীনে, এই সপ্তাহে প্রকাশিত অফিসিয়াল ম্যানুফ্যাকচারিং PMI অনুসারে দেশটির শিল্প কার্যক্রম ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। নতুন রপ্তানি অর্ডার ২০২২ সালের ডিসেম্বরের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে এবং এপ্রিল ২০২৩ সালের পর সবচেয়ে বড় পতনের শিকার হয়েছে।
আগেই যেমনটি উল্লেখ করেছি, এই খবর কারেন্সি মার্কেটে ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটের ক্রয় এবং মার্কিন ডলার বিক্রির প্রবণতা সৃষ্টি করেছে।
EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
বর্তমানে, ক্রেতাদের জন্য মূল লক্ষ্য হবে 1.1337 লেভেল ব্রেক করা। কেবল তখনই 1.1386 লেভেল টেস্টের সম্ভাবনা তৈরি হবে। এরপর পেয়ারটির মূল্য 1.1437 লেভেলের দিকে অগ্রসর হতে পারে, যদিও বড় বিনিয়োগকারীদের সমর্থন ছাড়া মূল্যের এই লেভেল পর্যন্ত পৌঁছানো কঠিন হবে। সর্বশেষ লক্ষ্যমাত্রা হবে 1.1487। যদি ইনস্ট্রুমেন্টটির দরপতন হয়, তাহলে আমি 1.1265 লেভেলের কাছাকাছি শক্তিশালী ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার প্রত্যাশা করবো। যদি সেখানে প্রতিক্রিয়া না দেখা যায়, তাহলে 1.1215-এর নতুন লো অথবা 1.1185 লেভেল থেকে লং পজিশনে এন্ট্রির কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।
GBP/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
পাউন্ড ক্রেতাদের জন্য তাৎক্ষণিক লক্ষ্য হলো 1.3315 রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করা। কেবল তখনই মূল্যের 1.3354 লেভেলের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে — যার উপরে ওঠা বেশ কঠিন হবে। সর্বশেষ লক্ষ্যমাত্রা থাকবে 1.3394 লেভেল। যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যায়, তাহলে বিক্রেতারা 1.3280 লেভেলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা সফল হয়, তাহলে GBP/USD পেয়ারের মূল্য এই রেঞ্জ ব্রেক ব্রেক করে নিচের দিকে যেয়ে ক্রেতাদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াবে এবং পেয়ারটির মূল্য 1.3250 এবং পরবর্তীতে 1.3205 লেভেলে নিচের দিকে নেমে যেতে পারে।