empty
 
 
28.07.2025 09:25 AM
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে কঠিন এক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে

দীর্ঘ আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার খবরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোর দর বৃদ্ধি পায়। চুক্তি অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে 15% শুল্ক গুণতে হবে। যদিও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা 10% শুল্ক চেয়েছিল, তবে 15% শুল্ক ট্রাম্পের হুমকি দেওয়া 30%-এর তুলনায় অনেকটাই সহনীয় — কারণ 30% শুল্ক কার্যকর হলে ইইউ-এর জিডিপিতে বড় ধরনের ধস নামতে পারত।

চুক্তিটি উল্লেখযোগ্যভাবে ট্রাম্প ঘোষিত উচ্চ শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্টজ ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিসহ একাধিক ইউরোপীয় নেতা এই চুক্তিকে "টেকসই" বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

This image is no longer relevant

গতকাল রোববার ট্রাম্প ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লাইয়েন স্কটল্যান্ডের টার্নবেরিতে ট্রাম্পের গলফ ক্লাবে যৌথভাবে চুক্তির বিষয়টি ঘোষণা করেন। তবে এখনো চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি, এবং কোনো আনুষ্ঠানিক নথিও প্রকাশিত হয়নি। এই চুক্তির আওতায় ১ আগস্ট থেকে 15% শুল্ক হার কার্যকর হবে। ট্রাম্প এটিকে "সবচেয়ে বড় চুক্তি" বলে আখ্যায়িত করেছেন, এবং ভন ডার লাইয়েন বলেছেন, এটি "স্থিতিশীলতা ও পূর্বাভাসযোগ্যতা" নিয়ে আসবে। তবে নির্দিষ্ট কোনো বিস্তারিত না থাকায়, চুক্তির পরিধি, ছাড় ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে প্রকৃত প্রভাব মূল্যায়নের জন্য চুক্তির পূর্নাঙ্গ বিশ্লেষণ জরুরি।

তবুও, চুক্তিতে পৌঁছানোই ট্রান্সআটলান্টিক বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনের দিকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে। চুক্তির আনুষ্ঠানিক নথি প্রকাশিত হলে এর সুনির্দিষ্ট শর্তগুলো স্পষ্ট হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মূল্যায়ন সম্ভব হবে।

চুক্তির ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ইইউ থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে, যা ইইউ কর্তৃক আমদানির ওপর আরোপিত শুল্কের তুলনায় অনেক বেশি। ভন ডার লাইয়েন বলেন, এই চুক্তির উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইইউ-এর বাণিজ্য উদ্বৃত্তর পুনঃসাম্যবস্থাপন। তবে চুক্তিতে কিছু আপোষমূলক শর্ত থাকায় ইউরোপের কিছু শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে। জার্মানির প্রধান ইন্ডাস্ট্রি লবির মতে, এটি দুই মহাদেশের গভীরভাবে সংযুক্ত অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর বার্তা দেয়।

ভন ডার লাইয়েন ও ট্রাম্প চুক্তির কিছু মূল দিক নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। ট্রাম্প বলেন, শুল্ক শুধু গাড়ি নয়, "গাড়ি ব্যতীত সবকিছুতেই" প্রযোজ্য হবে, ব্যতিক্রম শুধু ফার্মাসিউটিক্যালস ও ধাতব পণ্যে।

পরে এক প্রেস কনফারেন্সে ইইউ-এর নির্বাহী সংস্থার প্রধান বলেন, 15% শুল্ক একটি সমন্বিত হার হবে, যা খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে যোগ হবে না এবং এটি ফার্মাসিউটিক্যালস, চিপস এবং গাড়ির উপর প্রযোজ্য হবে। তিনি জানান, ধাতব পণ্যে শুল্ক কমানো হবে এবং একটি কোটা সিস্টেম চালু করা হবে। ভন ডার লাইয়েন বলেন, "আমরা ফার্মাসিউটিক্যালসে 15% শুল্ক আরোপ করছি। এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা আলাদাভাবে নথিভুক্ত করা হবে।" তিনি আরও বলেন, যদিও সামগ্রিক হারের গুরুত্ব খাটো করে দেখা উচিত নয়, এটি এখন পর্যন্ত অর্জনযোগ্য সেরা চুক্তি।

ইইউ আরও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি কিনতে সম্মত হয়েছে, বর্তমান অঙ্গীকার ছাড়াও আরও ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে, মার্কিন পণ্যের উপর শূন্য শুল্কে ইইউ বাজার খুলে দিতে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সামরিক সরঞ্জাম কিনতে সম্মতি প্রদান করেছে। ভন ডার লাইয়েন জানান, ইউরোপীয় ওয়াইন ও স্পিরিটস নিয়ে সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান হবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এই চুক্তি না হলে ১ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গড় কার্যকর শুল্ক ১৩.৫% থেকে বেড়ে ১৮% হয়ে যেত। নতুন চুক্তি সেই হারকে কমিয়ে ১৬%-এ নামিয়ে এনেছে।

পূর্বেই বলা হয়েছিল, এই চুক্তি ইইউ-এর স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় — এই খাতগুলোতে এখনও ৫০% শুল্ক বহাল থাকবে। তবে অ্যারোস্পেস পণ্যগুলো আগের মতোই শুল্কমুক্ত থাকবে। কর্তৃপক্ষ স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির জন্য একটি কোটা ব্যবস্থার শর্ত নিয়েও আলোচনা করেছেন, যাতে নির্দিষ্ট সীমার নিচে কম শুল্ক এবং তার উপরে ৫০% স্ট্যান্ডার্ড শুল্ক কার্যকর হবে।

এই নতুন ইইউ–মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি ভবিষ্যতে কী ফল বয়ে আনবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আপাতত ট্রেডার ও বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, যা কারেন্সি ও স্টক মার্কেটে প্রতিফলিত হয়েছে।

বর্তমানে EUR/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1760 লেভেলে পুনরুদ্ধারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কেবল তখনই এই পেয়ারের মূল্যের 1.1790 লেভেল টেস্ট করার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এরপর মূল্য 1.1825 পর্যন্ত যেতে পারে, যদিও মার্কেটের বড় ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া তা কঠিন হবে। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.1860-এর লেভেল। অন্যদিকে, যদি পেয়ারটির দরপতন ঘটে, তাহলে মূল্য 1.1730 লেভেলে থাকা অবস্থায় প্রথম শক্তিশালী ক্রয়ের আগ্রহ দেখা যেতে পারে। সেখানে মূল্যের প্রতিক্রিয়া না দেখা গেলে, 1.1710-এর লেভেল রিটেস্টের জন্য অপেক্ষা করাই উত্তম হবে, অথবা 1.1680 থেকে লং পজিশন বিবেচনা করা যেতে পারে।

GBP/USD পেয়ারের টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, পাউন্ড ক্রেতাদের এই পেয়ারের মূল্যের নিকটবর্তী রেজিস্ট্যান্স 1.3450 ব্রেক করাতে হবে। কেবল তখনই এই পেয়ারের মূল্যের 1.3475 লেভেল পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হবে, যদিও ওই লেভেলের উপরে উঠতে পারা কঠিন হতে পারে। চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা হলো 1.3500-এর লেভেল। অন্যদিকে, যদি পেয়ারটির দরপতন শুরু করে, তাহলে মূল্য 1.3410 লেভেল থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। মূল্য এই রেঞ্জ ব্রেক করলে ক্রেতাদের বড় ধাক্কা আসবে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3380-এর সর্বনিম্ন লেভেলে নেমে যেতে পারে, এরপর 1.3350 পর্যন্ত দরপতন সম্প্রসারিত হতে পারে।

Recommended Stories

এখন কথা বলতে পারবেন না?
আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন চ্যাট.