আরও দেখুন
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জুলাইয়ের বৈঠক শেষে প্রত্যাশামতোই সকল মুদ্রানীতি অপরিবর্তিত রাখে, যা ছিল একটি পূর্বপরিকল্পিত ও বিনিয়োগকারীদের অনুধাবিত দৃশ্যপট। বিনিয়োগকারীরা জুলাইয়ের বৈঠকের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তকে প্রায় উপেক্ষাই করেছে বলা যায়। EUR/USD পেয়ারের মূল্য কয়েক দশমিক পয়েন্ট কমলেও (মুভমেন্ট-স্থবিরতা বজায় রেখে), খুব দ্রুত ক্রেতারা নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং তিন সপ্তাহের সর্বোচ্চ লেভেল হালনাগাদ করে 18তম ফিগারের কাছাকাছি পৌঁছে যায়।
বিনিয়োগকারীদের এমন প্রতিক্রিয়ার পেছনে কী কারণ রয়েছে? প্রথমেই বলা দরকার, ট্রেডাররা ইতোমধ্যেই জুন মাসেই ইসিবির জুলাইয়ের বৈঠকের সম্ভাব্য ফলাফল মূল্যায়ন করে ফেলেছিল, বিশেষত যখন আগের মাসের বৈঠকের ফল প্রকাশিত হয়। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, পরবর্তীতে সেপ্টেম্বরের আগে সুদের হার কমানো হবে না এবং জুলাইতে তো একেবারেই হবে না। তাই, এই ফলাফল মার্কেটে বিস্ময় বা হতাশার সৃষ্টি না করলেও কোনো উদ্দীপনাও তৈরি করেনি।
তবে ইসিবির প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের জন্য সহায়ক বক্তব্য দেন—তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ ছাড়াই "আগামী কয়েক মাসে" পরিস্থিতির পরিবর্তন ও ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। উল্লেখযোগ্য যে, জুলাই সভার আগে রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ-এর মতো প্রভাবশালী সংস্থাগুলোর সমীক্ষায় বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ প্রত্যাশা করেছিলেন, সেপ্টেম্বরেই পরবর্তী দফায় আর্থিক নীতিমালা নমনীয় করা হবে । এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়: লাগার্দ যে সময়কালের কথা ("কয়েক মাস") উল্লেখ করলেন, সেখানে কি সেপ্টেম্বর বৈঠকও অন্তর্ভুক্ত? বিষয়টি বিতর্কযোগ্য।
তবে, তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন যে, বাণিজ্য সংঘাতের দ্রুত সমাধান "অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে উদ্দীপিত করবে, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করবে এবং বিনিয়োগকারীদের সামগ্রিক মনোভাবকে ইতিবাচক করবে।"
অর্থাৎ, লাগার্দ ভবিষ্যতের নীতিগত সিদ্ধান্তকে মার্কিন-ইইউ বাণিজ্য আলোচনার ফলাফলের সঙ্গে যুক্ত করে ফেলেছেন। একই সময়ে, তিনি ভবিষ্যৎ নীতিগত অবস্থান ব্যাখ্যায় "বিরতি" শব্দটি ব্যবহার করেননি, যা গুরুত্বপূর্ণ—কারণ এসব বক্তব্য সাধারণত ভাষণ লেখকদের দ্বারা সুপরিকল্পিতভাবে লেখা থাকে, এবং প্রতিটি শব্দের গুরুত্ব থাকে (এমনকি অনুপস্থিত হলেও)।
জুলাইয়ের বৈঠকের পর ডভিশ বা নমনীয় নীতির প্রত্যাশা উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। ব্লুমবার্গের হিসাব অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে ইসিবির সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা কমে 23–25%-এ দাঁড়িয়েছে, যেখানে বৈঠকের আগে তা ছিল 40–45%।
লাগার্দের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় EUR/USD পেয়ারের মূল্য তিন সপ্তাহের সর্বোচ্চ লেভেল হালনাগাদ করে 1.1789-এ পৌঁছে।
এই পেয়ারের ক্রেতারা বাড়তি সহায়তা পায় বৃহস্পতিবার প্রকাশিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরস্পরবিরোধী PMI সূচক থেকে। জুলাইয়ের ম্যানুফ্যাকচারিং বা উৎপাদন সংক্রান্ত PMI হঠাৎ করে কমে 49.5-এ নেমে যায়—গত বছরের ডিসেম্বরের পর প্রথমবারের মতো সূচকটি সংকুচিত হয়েছে। অধিকাংশ বিশ্লেষক 52.7-এ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন (জুনে ছিল 52.9)। একইসঙ্গে, সার্ভিসেস বা পরিষেবা সংক্রান্ত PMI পূর্বাভাস ছাড়িয়ে 55.2-এ পৌঁছায় (পূর্বাভাস ছিল 53.0)। কম্পোজিট PMI বেড়ে 54.6-এ ওঠে, যা ডিসেম্বর 2024-এর পর সর্বোচ্চ স্তর।
এর মানে, শক্তিশালী পরিষেবা খাত দুর্বল উৎপাদন খাতকে পুষিয়ে দিচ্ছে, যা সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখছে। তবে উৎপাদন খাতের সংকোচন ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।
উল্লেখযোগ্য যে, বৃহস্পতিবার প্রকাশিত মার্কিন শ্রমবাজার সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ফলাফল যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। সাপ্তাহিক প্রাথমিক বেকারভাতার আবেদনের সংখ্যা 217,000-এ নেমে আসে—যেখানে পূর্বাভাস ছিল 227,000। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, এই সূচক টানা ছয় মাস ধরে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে এবং এপ্রিল 2025-এর পর সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।
তারপরও, এই মিশ্র মৌলিক পরিস্থিতির মধ্যে EUR/USD পেয়ারের ক্রেতারা মূল্যের 1.18-এর লেভেল ব্রেক করাতে পারেনি। একইসাথে, বিক্রেতারাও নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। মার্কেট এখন মার্কিন-ইইউ বাণিজ্য আলোচনার ফলাফলের অপেক্ষায় স্থবির হয়ে আছে। সম্ভবত এটাই সেই প্রধান মৌলিক উপাদান যা মাঝারি মেয়াদে এই পেয়ারের মূল্যের গতিপথ নির্ধারণ করবে। বাকি উপাদানগুলো—এমনকি ইসিবির জুলাইয়ের বৈঠকও—গৌণ ভূমিকা পালন করছে।
টেকনিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে, দৈনিক চার্টে EUR/USD পেয়ারের মূল্য বলিঞ্জার ব্যান্ডের মধ্যবর্তী ও ঊর্ধ্ব রেখার মাঝামাঝি এবং সব ইচিমোকু সূচকের ওপরে অবস্থান করছে (H4 টাইমফ্রেমেও একই চিত্র, যেখানে ইচিমোকু "প্যারেড অব লাইনস" বুলিশ সিগনাল গঠন করেছে)। টেকনিক্যাল চিত্রটি লং পজিশনের সুবিধা তুলে ধরছে, যেখানে প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা 1.1830 (দৈনিক চার্টে বলিঞ্জার ব্যান্ডের ঊর্ধ্ব রেখা)। তবে মৌলিক দিক থেকে সতর্কবার্তা রয়ে গেছে: আলোচনার নেতিবাচক ফলাফল EUR/USD পেয়ারের পুরো টেকনিক্যাল চিত্রকে বিক্রেতাদের পক্ষে উল্টে দিতে পারে।