empty
 
 
15.08.2025 09:42 AM
মার্কিন উৎপাদক মূল্য সূচকের ফলাফল বিনিয়োগকারীদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? (বিটকয়েন ও GBP/USD-এর পুনয়ায় দর বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে)

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত মার্কিন উৎপাদক মূল্য সূচকের ফলাফল ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটে সীমিত হলেও প্রত্যাশার তুলনায় স্পষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। তবে এই প্রভাব গভীর বা দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। আসুন দেখি কেন এমনটি ঘটেছে।

প্রকাশিত উৎপাদক মূল্য সূচক (PPI) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বার্ষিক ভিত্তিতে সূচকটি অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে 3.3%-এ পৌঁছেছে, যেখানে পূর্বাভাস ছিল 2.5%-এ পৌঁছানোর। মাসিক ভিত্তিতেও সূচকটি জুনের 0.0% থেকে জুলাইয়ে হঠাৎ বেড়ে 0.9%-এ পৌঁছেছে। এই সূচকের মূল ফলাফলও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।

এই খবর প্রকাশের পর মার্কিন স্টক মার্কেটে চাহিদা হ্রাস পায়, ডলার ও তেলের দাম বৃদ্ধি, এবং পুনরায় ক্রিপ্টোকারেন্সির দরপতন শুরু হয়। তাহলে আসলে কী ঘটেছিল এবং কেন আজ ইতোমধ্যেই বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে?

হ্যাঁ, ট্রেডারদের গতকালের আচরণ অপ্রত্যাশিত ছিল, মূলত কারণ উৎপাদক মূল্য সূচকের ফলাফল বেশ চমকপ্রদ ছিল। আমার মতে, ট্রেডাররা এই খবরের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, আর এটাই মূল কথা — যদিও পশ্চিমা ব্যবসাভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলো দ্রুত আলোচনা শুরু করে যে ফেডারেল রিজার্ভ সেপ্টেম্বর মাসে সুদের হার কমানো থেকে বিরত থাকতে পারে। এর যুক্তি ছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগে শুল্ক কাঠামো পুনর্বিন্যাসের ফলে কোম্পানিগুলোর খরচ বেড়ে গেলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সেই লেনদেনের খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে, যা ভোক্তা মুদ্রাস্ফীতির পুনরায় বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করবে।

সত্যি বলতে, এমন বক্তব্য অদ্ভুত শোনায়। মার্কিন উৎপাদকরা কবে ভোক্তার বিষয়ে সত্যিই মাথা ঘামিয়েছে? কখনও না। সবসময়ই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান ছিল চাহিদা হ্রাস, যা বরং মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে দেয়। অতীতের দিকে তাকালে কিছুটা ঐতিহাসিক সাদৃশ্য পাওয়া যায় — 2018 সালে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, জুলাইয়ে মার্কিন উৎপাদক মূল্য সূচক বেড়ে 3.4%-এ পৌঁছেছিল, যা মহামারির আগে সর্বোচ্চ পর্যায়। সে সময় ভোক্তা মুদ্রাস্ফীতি ছিল 2.9%-এ, মূল সুদের হার ছিল 2%, এবং বেকারত্বের হার ছিল 4%-এ। তবে তখন মার্কিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন ছিল। তখনও বৃহৎ পরিসরের বৈশ্বিক বাণিজ্য সংঘাত শুরু হয়নি, যদিও বাণিজ্য উত্তেজনা তৈরি হচ্ছিল। তখনও বিশ্বে আমেরিকার প্রভাবশালী অবস্থান সুদৃঢ় ছিল। সেইসাথে ফেড নিজস্ব মুদ্রানীতি মডেল অনুসরণ করতে পারত।

অবশ্যই ইতিহাসের সঠিক পুনরাবৃত্তি হয় না, তবে তখন ও এখনের মধ্যে কিছু মিল আছে। সেই বছর, ফেড বছরের শেষ পর্যন্ত সুদের হার বাড়াতে পেরেছিল এবং সুদের হার 2.5%-এ পৌঁছেছিল। এরপর এলো মহামারি — আর সেটা ভিন্ন গল্প। এখন তবে তা সম্ভব নয়, কারণ মার্কিন অর্থনীতির সত্যিই নিম্ন সুদের হারের মাধ্যমে উদ্দীপনা প্রয়োজন, এমনকি স্বল্পমেয়াদে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকলেও। যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে হবে, যা অত্যন্ত কঠিন, এমনকি প্রায় অসম্ভব।

উল্লেখযোগ্য যে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে যখন মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন কার্যক্রম বিদেশে সরিয়ে নিয়েছে, তখন দেশে খুব সামান্য প্রকৃত উৎপাদন কার্যক্রম অবশিষ্ট থাকে। হ্যাঁ, প্রতিরক্ষা ও সামরিক খাত রয়ে গেছে, কিন্তু সেগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিপুল কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারে না। অন্যান্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যেমন জুতা, পোশাক, স্মার্টফোন ইত্যাদি সফলভাবে মেক্সিকো বা এশিয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছে। এই প্রবণতায় জাতীয় অর্থনীতির কাঠামো শিল্পভিত্তিক থেকে সেবাভিত্তিক হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, মার্কেটে উৎপাদক মূল্য সূচকের প্রভাব অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। বিনিয়ো কারীরা প্রধানত ভোক্তা মুদ্রাস্ফীতি (CPI) প্রতিবেদনের প্রতি প্রতিক্রিয়া জানায়। আমার মতে, মার্কেটের ট্রেডারদের গতকালের প্রতিক্রিয়া বেশ অদ্ভুত — আর আজকের বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া একেবারেই যৌক্তিক। এমন পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে স্পেকুলেটিভ, আর কিছু নয়।

সেপ্টেম্বরের বৈঠকের সুদের হার কমানো প্রসঙ্গে বলতে গেলে, ট্রাম্পের জন্য এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, ভূ-রাজনৈতিক বিষয়ও, কারণ তার লক্ষ্য হলো আমেরিকায় প্রকৃত উৎপাদন কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করা, কেবল এশিয়ায় তৈরি পণ্যের লেবেল বদলানো নয়।

আজ ট্রেডাররা জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হলো মার্কিন ট্রেজারি ইল্ডের পরিবর্তন, যা গতকাল প্রবৃদ্ধি প্রদর্শনের পর আজ আবার নিম্নমুখী হচ্ছে। ফেডারেল ফান্ডস ফিউচার্স আবারও সেপ্টেম্বরের বৈঠকে সুদের হার কমানোর 93.1% সম্ভাবনা দেখাচ্ছে, যা গতকাল সকালে 98% থেকে সন্ধ্যায় 90%-এ নেমে এসেছিল। সবকিছুই ইঙ্গিত করছে যে আগামী মাসে সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা এখনও বিদ্যমান।

তাহলে, আজ মার্কেট কী আশা করা যায়?

আমার বিশ্বাস, মার্কিন স্টক মার্কেটে পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট শুরু হবে — প্রধান স্টক সূচকের ফিউচারের দর ইতিমধ্যেই বাড়ছে। ডলার চাপের মধ্যে থাকবে, এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির দর সম্ভবত আবার বৃদ্ধি পাবে।

সামগ্রিকভাবে, আমি আশা করছি মার্কেটে মধ্যম পর্যায়ের ইতিবাচক মনোভাব অব্যাহত থাকবে, যা আরও শক্তিশালী হতে পারে যদি আলাস্কায় ট্রাম্প ও ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যকার শীর্ষপর্যায়ের বৈঠক ইতিবাচক ফলাফল জানা যায়।

দৈনিক পূর্বাভাস

This image is no longer relevant

This image is no longer relevant

বিটকয়েন
সেপ্টেম্বর মাসে ফেডের সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা পুনরুজ্জীবিত হওয়ার প্রেক্ষিতে স্থানীয় পর্যায়ে বিটকয়েনের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট দেখা যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ক্রিপ্টোকারেন্সিটির মূল্য ডলারের বিপরীতে 123,908.00 পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। 119,724.00 রেজিস্ট্যান্স ব্রেক করে মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হলে সম্ভাব্য ক্রয়ের লেভেল হতে পারে 119,943.62।

GBP/USD
ডলার দুর্বল হওয়ায় এই পেয়ারের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে, যা ফেডের সূদের হার কমানোর উচ্চ প্রত্যাশা পুনরায় জোরদার হওয়ার ফল। গতকাল প্রকাশিত যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের ইতিবাচক ফলাফলও এটি সমর্থন দিচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে এই পেয়ারের মূল্য প্রথমে 1.3590 এবং পরে 1.3630 পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। সম্ভাব্য ক্রয়ের লেভেল হতে পারে 1.3560।

Recommended Stories

এখন কথা বলতে পারবেন না?
আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন চ্যাট.