আরও দেখুন
গতকাল, মার্কিন উৎপাদক মূল্য সূচকের বৃদ্ধির পর আগামী মাসে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা হ্রাস পাওয়ায় স্বর্ণের দর এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন লেভেলে নেমে আসে।
মুদ্রানীতির সম্ভাবনা পুনর্মূল্যায়নের ফলে মার্কিন ডলারের দর বৃদ্ধি পাওয়ায় এই মূল্যবান ধাতুর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে। স্বর্ণ সাধারণত ডলারের সঙ্গে বিপরীতভাবে সম্পর্কযুক্ত, তাই শক্তিশালী মার্কিন মুদ্রা অন্যান্য মুদ্রাধারী বিনিয়োগকারীদের জন্য এর আকর্ষণ কমিয়ে দেয়। সুদের হার দীর্ঘ সময় উচ্চ পর্যায়ে থাকার প্রত্যাশাও স্বর্ণের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, কারণ এটি সুদভিত্তিক আয় উৎপন্ন করে না, যা উচ্চ সুদের হারের সময় বন্ড এবং অন্যান্য স্থির আয়-ভিত্তিক সম্পদের তুলনায় স্বর্ণকে কম আকর্ষণীয় করে তোলে।
তবে, স্বল্পমেয়াদি চাপ থাকা সত্ত্বেও স্বর্ণের দীর্ঘমেয়াদি চাহিদাকে সমর্থনকারী মৌলিক কারণগুলো অটুট রয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার উদ্বেগ এবং মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
গতকালের সেশন শেষে, স্বর্ণের দর আউন্সপ্রতি 3,330 ডলারে নেমে আসে, যা আগের সেশনে 0.6% পতনের পর ঘটে। উতপাদক মূল্যসূচক (PPI) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুলাই মাসে সূচকটি গত তিন বছরের মধ্যে দ্রুততম হারে বেড়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশের পর বন্ডের ইয়িল্ড এবং ডলার শক্তিশালী হয়েছে, যা জাতীয় মুদ্রায় মূল্যায়িত এবং সুদবিহীন স্বর্ণের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
এখন ট্রেডাররা সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদ কমানোর সম্ভাবনা প্রায় 90% হিসেবে মূল্যায়ন করছে, যা এই সপ্তাহের শুরুতে সম্পূর্ণভাবে মূল্যায়িত ছিল।
বছরের শুরু থেকে এই মূল্যবান ধাতুর দর এক-চতুর্থাংশেরও বেশি বেড়েছে, যার বেশিরভাগ বৃদ্ধি প্রথম চার মাসে ঘটেছে। এই বৃদ্ধি মূলত ভূ-রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা বাড়ায় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয় কার্যক্রমও স্বর্ণের দর বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে।
আগামী দিনগুলোতে, স্বর্ণের মূল্যের মুভমেন্ট সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের ফলাফল, ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের বিবৃতি এবং ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটের সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। আজ আলাস্কায় নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বৈঠকও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই আলোচনার ফলাফল বিদেশি অ্যাসেটের চাহিদাকে প্রভাবিত করতে পারে। ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে, স্বর্ণের বার-এর ওপর মার্কিন শুল্ক প্রযোজ্য হবে কি না সেই অনিশ্চয়তা নিউ ইয়র্ক ফিউচারসের প্রিমিয়ামকে লন্ডন স্পট মূল্যের তুলনায় তীব্রভাবে বাড়িয়ে দেয়। তবে, গত সোমবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, এই শুল্ক আরোপ করা হবে না, ফলে দুই মার্কেটে মধ্যে ব্যবধান কমে আসে।
বর্তমান স্বর্ণের টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, ক্রেতাদের নিকটতম রেজিস্ট্যান্স 3,370 ব্রেক করাতে হবে। এটি তাদের স্বর্ণের মূল্যকে 3,400 লেভেলের লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবে, যা ব্রেকআউট করে ঊর্ধ্বমুখী হওয়া মূল্যের পক্ষে কঠিন হবে। সবচেয়ে দূরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা হলো 3,440 লেভেল। যদি স্বর্ণের দর কমে যায়, বিক্রেতারা 3,335 লেভেলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। তারা সফল হলে, এই রেঞ্জ ব্রেক করলে সেটি ক্রেতাদের অবস্থানে গুরুতর আঘাত হানবে এবং স্বর্ণের দরকে 3,313-এ নামিয়ে আনবে, যারপর 3,291-এর দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।