আরও দেখুন
যদিও বর্তমানে মার্কেটে সহজলভ্য অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের প্রতি বড় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না—বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে—এবং এখন ট্রেডাররা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপের দিকেই বেশি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করছে, যিনি নিজে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন, তবুও এই সপ্তাহের কিছু প্রতিবেদন বেশ গুরুত্বপূর্ণ, যা ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার হ্রাস পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
সোমবার প্রকাশিত ISM ম্যানুফ্যাকচারিং PMI দিয়ে শুরু হলে দেখা যাচ্ছে যে মে মাসে উৎপাদন খাতের সংকোচন অব্যাহত রয়েছে। সূচকটি পূর্বাভাস অনুযায়ী 49.3-এ বাড়ার পরিবর্তে 48.7 থেকে কমে 48.5-এ নেমে এসেছে। এটি নির্দেশ করে যে উৎপাদন খাতের নেতিবাচক ধারা এখনো বজায় রয়েছে—যা চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রকাশিত নেতিবাচক জিডিপি প্রতিবেদনের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যদিকে, ISM সার্ভিসেস PMI সূচক 50.2 থেকে বেড়ে 52.0 হয়েছে, যদিও পূর্বাভাস অনুযায়ী 52.3-এ পৌঁছায়নি।
প্রতিবেদনগুলোর ফলাফল মিশ্র হলেও, সামগ্রিকভাবে মার্কিন অর্থনীতি যে একটি কঠিন অবস্থানে রয়েছে তা স্পষ্ট। ট্রাম্পের ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল এখন পর্যন্ত "মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন" লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব এখন দুর্বল হচ্ছে, যার ছায়া পড়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও। বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর প্রায় জবরদস্তিমূলক চাপ প্রয়োগের কৌশল আংশিকভাবেই ফলাফল এনেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন এখনো নিজেদের অবস্থানে অনড় এবং দীর্ঘ সময় ধরে তা ধরে রাখার সক্ষমতা দেখাচ্ছে।
ট্রাম্পের নেতৃত্ব মার্কেটে কী ধরনের হুমকি তৈরি করছে?
সম্ভাব্যভাবে সামনে নিম্নমুখী প্রবণতার এক অবিরাম চক্রের হুমকি রয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতি বৈশ্বিক ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, ডলার-ভিত্তিক অ্যাসেটে বিনিয়োগের আগ্রহ কমবে এবং মার্কিন ট্রেজারিগুলো বন্ডের চাহিদা হ্রাস পেতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে USDX (ICE ডলার সূচক) 98.00 পয়েন্ট টেস্ট করতে পারে। সামান্য কারেকশনের পর স্বর্ণের দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে 3435.00 লেভেলের কাছাকাছি স্থানীয় উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।
এই টানা নেতিবাচক খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সক্রিয়ভাবে বিনিয়োগের আগ্রহ হ্রাস পাবে। ট্রাম্প সাময়িকভাবে চীন এবং ইইউর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত করলেও এখন আবারও স্টিল আমদানির ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০% করার হুমকি দিয়েছেন। মূলত, তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের দুর্বল জায়গা খুঁজে বের করে সেখানে আঘাত করে ফল আদায়ের কৌশল গ্রহণ করেছেন—তবে তিনি সফল হবেন কি না, সেটিই বড় প্রশ্ন। এই প্রেক্ষাপটে মার্কেটে অ্যাসেটের মূল্যের ব্যাপক ওঠানামা অব্যাহত থাকবে এবং অস্থিরতা অব্যাহত থাকবে।
এই সপ্তাহে প্রকাশিতব্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন গুলোর মধ্যে ইউরোজোনের মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন অন্যতম, যেটি বার্ষিক ভিত্তিতে ২.২% থেকে কমে ২.০%-এ নেমে আসার আশা করা হচ্ছে। যদি তা নিশ্চিত হয়, তাহলে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর আবারও ০.২৫% হারে সুদের হার হ্রাসের চাপ সৃষ্টি হবে—সম্ভবত এই সপ্তাহের বৈঠকেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
এছাড়াও, মার্কিন শ্রমবাজার সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে—বুধবার ADP এবং শুক্রবার লেবার ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। কর্মসংস্থানের সংখ্যা গেলে ডলারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি হবে এবং ফেডের সুদের হার কমার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে। এতে স্টক মার্কেটে প্রবৃদ্ধি দেখা যেতে পারে, তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট কিছুটা চাপের মুখের পড়তে পারে।
অবশ্যই, ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের মধ্যে প্রত্যাশিত ফোনালাপের সম্ভাবনা এখনো ট্রেডারদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এবং এই আলোচনার ফলাফল বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমিত বা আরও বাড়াতে পারে।
সামগ্রিক চিত্র বিশ্লেষণ করে বলা যায়, এই সপ্তাহে উচ্চমাত্রার অস্থিরতা বজায় থাকবে।
আজকের পূর্বাভাস
#USDX
নেতিবাচক মনোভাব ও শ্রমবাজার সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ফলাফলের প্রভাবে ডলার সূচক 98.00-এর দিকে নেমে যেতে পারে। 98.65-এর ব্রেক করে সূচকটি নিম্নমুখী হলে চাপ আরও বাড়বে। সম্ভাব্যভাবে 98.50-এর লেভেলের আশেপাশে সেল এন্ট্রি লেভেল হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
EUR/JPY
এই পেয়ারটি বর্তমানে 163.00 লেভেলের ওপরে কনসোলিডেশন করছে। ইসিবি সুদের হার 0.25% হ্রাস করলে এবং ক্রিস্টিন লাগার্দের পরবর্তী সংবাদ
সম্মেলনের মন্তব্য এই পেয়ারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে পেয়ারটির মূল্য 162.10-এর দিকে নেমে যেতে পারে। 162.90-এর কাছাকাছি লেভেল সম্ভাব্য সেল এন্ট্রি পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে ।