empty
 
 
23.07.2025 07:23 AM
AUD/USD: রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার বৈঠকের কার্যবিবরণীতে কী উঠে এল?

দিনের প্রথমার্ধে, মার্কিন ডলারের দরপতন হওয়া সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়ান ডলারের দর মার্কিন মুদ্রার বিপরীতে নিম্নমুখী প্রবণতা প্রদর্শন করেছে। মার্কিন ডলার সূচক চাপের মধ্যে থাকায় অজি মুদ্রার দর AUD/USD পেয়ারের মূল্যকে নিম্নমুখী করছে। যদিও মার্কিন ডলারের দরপতনের কারণে এই পেয়ারের মূল্যের বিয়ারিশ মোমেন্টাম তুলনামূলকভাবে দুর্বল ও স্বল্পস্থায়ী ছিল, তবুও সামগ্রিক পরিস্থিতি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

জুলাইয়ের বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রকাশের পর অস্ট্রেলিয়ান ডলার চাপের মুখে পড়ে, কারণ এতে এমন কোনো বার্তা ছিল না যা AUD/USD পেয়ারের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারত।

This image is no longer relevant

সংক্ষেপে বলতে গেলে: রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া সর্বশেষ বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার বিপরীতে গিয়ে সকল আর্থিক নীতিমালা অপরিবর্তিত রাখে, যেখানে অধিকাংশ বিশ্লেষক সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট হার হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক 'অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণের' অবস্থান নিয়েছে, তবুও জুলাইয়ের বৈঠকের ফলাফল অস্ট্রেলিয়ান ডলারের জন্য নেতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাস্তবে, রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া সুদের হার হ্রাসে বিরতি নিলেও পূর্বঘোষিত মুদ্রানীতি নমনীয়করণের পদক্ষেপ থেকে সরে আসেনি। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর, আগস্টে সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ার শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। জুন মাসে দেশটির বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়ায় 4.3%-এ, যা নভেম্বর 2021–এর পর সর্বোচ্চ। ১৬–২৪ বছর বয়সীদের বেকারত্বের হার 9.5% থেকে বেড়ে 10.4% হয়। কর্মসংস্থান মাত্র 2,000 বেড়েছে, যেখানে বিশ্লেষকেরা 21,000 বাড়ার প্রত্যাশা করেছিলেন। পূর্ণকালীন চাকরি কমে 38,200 এবং খণ্ডকালীন চাকরি বাড়ে 40,200। পুরো অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে মোট কর্মঘণ্টা 0.9% হ্রাস পায়।

অর্থাৎ, শ্রমবাজারের বর্তমান অবস্থা আগস্টে আবারো সুদের হার কমানোর জন্য রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়াকে প্রয়োজনীয় সুযোগ দিচ্ছে। এই পরিসংখ্যানের চূড়ান্ত অংশ হলো মূল্যস্ফীতি, যার প্রান্তিকভিত্তিক ফলাফল আগামী সপ্তাহে — 30 জুলাই — প্রকাশিত হবে।

কয়েকজন বিশ্লেষকের প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, দ্বিতীয় প্রান্তিকে অস্ট্রেলিয়ার সামগ্রিক ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) বার্ষিক ভিত্তিতে 2.4% থেকে 2.1%-এ নেমে আসতে পারে। প্রান্তিক ভিত্তিতে ভোক্তা মূল্য সূচক 0.6% (বা কিছু অনুমান অনুযায়ী 0.7%) হতে পারে। মূল মূল্যস্ফীতি 2.5% (বা কিছু অনুমান অনুযায়ী 2.7%) হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভোক্তা মূল্য সূচকের এই প্রত্যাশিত মন্থরতার পেছনে একাধিক মৌলিক কারণ রয়েছে: ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া শ্রমবাজার, বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির দুর্বল গতি, দুর্বল ভোক্তা চাহিদা (ABS-এর তথ্য অনুসারে এপ্রিল–মে মাসে খুচরা বিক্রয়ে স্থবিরতা/নেতিবাচক ফলাফল দেখা যায়), পণ্যমূল্য ও জ্বালানির দামে পতন (আয়রন অর ও গ্যাসের রপ্তানি মূল্য সূচক কমেছে, জুন–জুলাই মাসে পেট্রলের গড় দামের 4–6% পতন হয়েছে ), এবং বাড়িভাড়ার স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। পাশাপাশি মজুরি বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট গৌণ মূল্যস্ফীতিও দুর্বল হচ্ছে (প্রথম প্রান্তিকে মজুরি মূল্য সূচক বা WPI বার্ষিক ভিত্তিতে 3.4%, যা এক বছর আগে 4.0% ছিল)। উচ্চ মাত্রায় থাকার প্রবণতাও এতে ভূমিকা রাখতে পারে: 2024-এর দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির ভোক্তা মূল্য সূচক বা CPI 3.8%-এ পৌঁছেছিল, যা তুলনামূলকভাবে উচ্চ ভিত্তিমান তৈরি করেছে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্ষিক হারের হিসাবকে নিচের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সংক্ষেপে, এসব সংকেত মিলিয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে দ্বিতীয় প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে আগস্টে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত জুলাই মাসের রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার বৈঠকের কার্যবিবরণী এই ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থান গ্রহণের সম্ভাবনা নিশ্চিত করে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, তারা মুদ্রানীতি নমনীয়করণের পথেই রয়েছে — কেবল সুদের হার হ্রাসের গতি নিয়ে আলোচনা চলছে। জুলাইয়ে বিরতির প্রসঙ্গে বোর্ড বলেছে, এটি মূল্যস্ফীতি ও শ্রমবাজারের দুর্বলতা সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পেতে নেওয়া হয়েছে।

ফলে, বর্তমান মৌলিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বোঝা যাচ্ছে, AUD/USD পেয়ারের মূল্যের স্থায়ী ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কেবল তখনই সম্ভব যদি মার্কিন ডলার দরপতন বজায় রাখে। অজি ডলার এককভাবে দেশীয় মৌলিক ভিত্তির উপর ভর করে এই পেয়ারের মূল্যকে ঊর্ধ্বমুখী করতে সক্ষম নয়। উদাহরণস্বরূপ, এই পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী মোমেন্টাম কার্যকরভাবে প্রশমিত হয়েছে মার্কিন ডলার সূচকের 98.23 থেকে নেমে মাঝামাঝি 97-এর রেঞ্জে আসার মাধ্যমে, যা সবমিলিয়ে মার্কিন মুদ্রার দুর্বলতা প্রতিফলিত করে। ফেডের সদর দপ্তরের ব্যয়বহুল সংস্কার সংক্রান্ত বিতর্ক — যেখানে জেরোম পাওয়েল মূল অভিযুক্ত, এবং তিনি হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে "অব্যবস্থাপনা"-র অভিযোগ ও এক কংগ্রেসম্যানের পক্ষ থেকে মিথ্যাচারের অভিযোগের মুখে পড়েছেন — তা মার্কিন ডলারের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। এর ফলেই অজি ডলার এখন তুলনামূলকভাবে আত্মবিশ্বাসী অবস্থানে রয়েছে।

টেকনিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে, দৈনিক চার্টে AUD/USD পেয়ারের মূল্য এখনও বলিঙ্গার ব্যান্ডসের মধ্যবর্তী ও নিম্ন লাইনে মাঝে, কুমো ক্লাউডের ওপরে, তবে টেনকান-সেন ও কিজুন-সেন লাইনের মাঝে অবস্থান করছে। দীর্ঘমেয়াদী বাই পজিশনের কথা ভাবা উচিত কেবল তখনই, যখন অজি ডলারের দর 0.6550-এর রেজিস্ট্যান্স লেভেল (D1-এ বলিঙ্গার ব্যান্ডসে মধ্য লাইন) ব্রেক করে উপরে উঠে। এ অবস্থায়, এই পেয়ারের মূল্য বলিঙ্গার ব্যান্ডস লাইনের মধ্য ও ঊর্ধ্ব মাঝে অগ্রসর হবে এবং ইচিমোকু সূচক একটি বুলিশ "প্যারেড অব লাইনস" সিগনাল গঠন করবে। এই ঊর্ধ্বমুখী মোমেন্টামের টার্গেট হবে 0.6620 — যা দৈনিক চার্টে বলিঙ্গার ব্যান্ডসের ঊর্ধ্ব লাইন। বর্তমানে মার্কিন ডলারের সার্বিক দরপতনের প্রেক্ষিতে শর্ট পজিশন এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

Recommended Stories

এখন কথা বলতে পারবেন না?
আপনার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন চ্যাট.