আরও দেখুন
যখন মার্কিন স্টক মার্কেট আরেকটি সর্বোচ্চ লেভেল থেকে কিছুটা নিম্নমুখী হচ্ছে, তখন বাফেট সূচক আবারও নতুন রেকর্ড গড়ছে। উল্লেখ্য, ওয়ারেন বাফেটের সূচকটি মূলত মার্কিন স্টক মার্কেটের মোট মূলধনের তুলনায় জিডিপির অনুপাত নির্দেশ করে। বর্তমানে এটি ঐতিহাসিক গড় থেকে দুইটি স্ট্যান্ডার্ড ডিভিয়েশনেরও বেশি উপরে অবস্থান করছে।
সাধারণত, বিনিয়োগকারীরা এমন পরিস্থিতিকে মার্কেটে অতিমূল্যায়নের ইঙ্গিত এবং সম্ভাব্য কারেকশনের পূর্বাভাস হিসেবে দেখেন। তবে মনে রাখতে হবে, বাফেট সূচকসহ যেকোনো সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক মার্কেটের ভবিষ্যৎ মুভমেন্টের নির্ভুল পূর্বাভাস দিতে পারে না—এটি কেবল একটি পরিপূরক বিশ্লেষণাত্মক প্রেক্ষাপট প্রদান করে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো এই বিষয়টি বোঝা যে জিডিপি একটি পশ্চাদপদ সূচক—যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অতীত ফলাফল প্রতিফলিত করে। অন্যদিকে, স্টক মার্কেট ভবিষ্যতমুখী এবং এটি ভবিষ্যতের কর্পোরেট আয় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বানুমান অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণে সচেষ্ট থাকে। ফলে, এই দুইয়ের মধ্যকার অসামঞ্জস্য মূলত বিনিয়োগকারীদের ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা থেকেই সৃষ্টি হয়।
তদ্ব্যতীত, বাজার মূলধন ও জিডিপির অনুপাত অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে সুদের হার, মুদ্রাস্ফীতি, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগকারীদের মনোভাব। ফেড থেকে প্রত্যাশিত নিম্ন সুদের হার বন্ডের তুলনায় ইকুইটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে, ফলে উচ্চ মূলধনের পক্ষে সহায়ক হয়। সুতরাং, বাফেট সূচকে "ওভারবট" সিগন্যাল দেখা হেলেও, মার্কেটের বুলিশ প্রবণতা শেষ ঘনিয়ে এসেছে তা এমন কোনো নিশ্চয়তা দেয় না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে, যেখানে বৈশ্বিক অর্থনীতি ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে—যদিও ট্রাম্প কর্তৃক শুল্ক আরোপের ফলে প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীর হয়েছে—এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখনো তারল্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে মার্কেটের অতিমূল্যায়ন এখনই উদ্বেগজনক পর্যায়ে মনে হচ্ছে না। তবে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকা উচিত এবং বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য মুদ্রানীতি কঠোর হওয়ার সম্ভাবনা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
এটি উল্লেখযোগ্য যে, সূচকটি অনেক আগেই ডট-কম বাবল এবং ২০০৮ সালের সংকটকালীন স্তর অতিক্রম করেছে। ঐতিহাসিকভাবে, মার্কেটে দরপতনের আগমুহূর্তে এমন উচ্চ অনুপাত দেখা গিয়েছে। তবে, ইতিহাস সবসময় হুবহু পুনরাবৃত্তি করে না। বর্তমান অর্থনৈতিক ও আর্থিক কাঠামো অনেকটাই ভিন্ন। যেমন—বর্তমানে টেক কোম্পানিগুলোর জিডিপি ও বাজার মূলধন গঠনে ভূমিকা অনেক বেশি। তদুপরি, বিশ্বায়ন ও আন্তঃসংযুক্ত ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটের কারণে বাফেট সূচক হয়তো আর মার্কিন অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থার যথাযথ প্রতিফলন নয়।
সুতরাং, বর্তমানে যে পরিস্থিতি রয়েছে তা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বজায় থাকতে পারে এবং ইকুইটি মার্কেটে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা চলমান থাকতে পারে, বিশেষত যখন ফেড কোনো এক সময় বর্তমান 4.5% সুদের হার থেকে হ্রাস শুরু করবে বলে প্রত্যাশা রয়েছে।
S&P 500-এর টেকনিক্যাল প্রেক্ষাপটের ক্ষেত্রে, আজ ক্রেতাদের প্রধান লক্ষ্য হবে এই পেয়ারের মূল্যের $6,385 রেজিস্ট্যান্স লেভেল অতিক্রম করানো। এই লেভেল ব্রেক করা গেলে আরও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সম্ভাবনা রয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রা হবে $6,392। ক্রেতাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে $6,400 লেভেলের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, যা তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে। তবে যদি মার্কেটে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায় এবং ঝুঁকি নেওয়ার আগ্রহ কমে যায়, তাহলে ক্রেতাদের সূচকটিকে $6,373 জোনের মধ্যে রাখতে হবে। এই লেভেল ব্রেক করা হলে সূচকটির দ্রুত $6,364 এবং পরবর্তীতে $6,355 পর্যন্ত দরপতনের সম্ভাবনা তৈরি হবে।