আরও দেখুন
সাধারণত অনিশ্চয়তা বিনিয়োগের শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয়, কিন্তু ২০২৫ সালে সেটি আর প্রযোজ্য নয়। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা এবং হোয়াইট হাউসের শুল্কনীতি থেকে সৃষ্টি হওয়া দ্বিগুণ অনিশ্চয়তাও S&P 500 সূচককে একাধিক রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাতে বাধা দিতে পারেনি। মজার বিষয় হলো, এই ব্রড মার্কেট সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এখনো শেষ হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত পণ্যের উপর শুল্ক আরোপে বিলম্বের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
হোয়াইট হাউস যখন ইউরোপকে সামরিক সহায়তা দিকে অস্বীকৃতি জানায় বা এর বিনিময়ে উপযুক্ত মূল্য চায়, তখন ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে ইউরোপ সেই সংকেতটি ঠিকভাবেই বুঝেছে: নিজে থেকে উদ্যোগ না নিলে কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে না। জার্মানি ও ইইউ তাদের সামরিক বাজেট বাড়িয়েছে, যার মধ্যে জার্মানির সামরিক খাতে €500 বিলিয়ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ইউরোর মূল্যের শক্তিশালী ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং ২০২৫ সালে S&P 500-এর তুলনায় ইউরোপীয় ও বৈশ্বিক স্টক সূচককে বেশি ঊর্ধ্বমুখী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ইউরোস্টক্স 600 এবং MSCI ওয়ার্ল্ড সূচকের এখনো প্রবৃদ্ধির পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে—এবং বিনিয়োগকারীরা সেটি ভালোভাবেই জানে।
S&P 500, ইউরোস্টক্স 600 এবং বৈশ্বিক ইকুইটি মার্কেট: প্রবণতা ও চালিকাশক্তি
তবে ইউরোপ এবং বৈশ্বিকভাবে ইকুইটির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত। মার্কিন মার্কেট এখনো বিশ্বের বৃহত্তম ইকুইটি মার্কেট হিসেবে অবস্থান করছে। মার্কিন ডলার-নির্ভর বন্ড বিশ্বে ফিক্সড-ইনকাম মার্কেটের 40% প্রতিনিধিত্ব করে, আর মার্কিন ইকুইটি MSCI বৈশ্বিক সূচকের 70% দখল করে আছে। এই প্রেক্ষাপটে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ, লিকুইড ও নমনীয় মার্কেটে বিনিয়োগ করাই এখনো সেরা কৌশল বলে মনে হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের গৃহীত নীতিমালা কিছুটা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করলেও, বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিচ্ছে।
অনেক বিনিয়োগকারী এখনো TINA (There Is No Alternative) কৌশল অনুসরণ করছে—মার্কিন সিকিউরিটিজের কোনো বিকল্প নেই। ২০২৫ সালে ইউরোস্টক্স 600 সূচক থেকে ব্যাপক মুনাফা করা গেলেও, মার্কিন ও ইউরোপীয় স্টকের ট্রেডিং ভলিউমের পার্থক্য ক্রমেই বাড়ছে। তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে S&P 500-এর সেই ব্যবধান কমানোর সম্ভাবনা যথেষ্ট। দুর্বল মার্কিন ডলার যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর তুলনায় ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর মুনাফায় বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ট্রেডিং ভলিউম: ইউরোস্টক্স 600 বনাম S&P 500
৯ জুলাইকে সামনে রেখে কোনো S&P 500 সূচকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সংশয় দেখা যায়নি—এটি হোয়াইট হাউসের ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির ডেডলাইন। ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছে যে, যদি যুক্তরাষ্ট্র সকল বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর পূর্বঘোষিত উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে, বিশেষত যাদের সঙ্গে এখনো চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি, তাহলে বৈশ্বিক পর্যায়ে ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতার ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। বিপরীতে, এই শুল্কবিরতির মেয়াদ বাড়ানো হলে সেটি হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে শুল্ক আরোপে অনিচ্ছার ইঙ্গিত দেবে—যা স্টক মার্কেটকে আরও ঊর্ধ্বমুখী করতে পারে।
দেখা যাচ্ছে, মার্কিন প্রশাসন দ্বিতীয় বিকল্পটি বেছে নিয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক ঘোষণা করেছেন, শুল্ক বৃদ্ধি শুধুমাত্র ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট নিশ্চিত করেছেন যে, যদি এর আগে কোনো বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তাহলে ২ এপ্রিল ঘোষিত শুল্ক কার্যকর হবে। হোয়াইট হাউসের অবস্থান স্পষ্ট হওয়ায় অনিশ্চয়তা হ্রাস পেয়েছে—এটি মার্কেটে বুলিশ প্রবণতা সৃষ্টি হওয়ার একটি সংকেত হিসেবে বিবেচনা করা জায়। তাহলে স্টক সূচকগুলো আরও ঊর্ধ্বমুখী হবে না কেন?
টেকনিক্যাল পূর্বাভাস
টেকনিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, দৈনিক চার্টে পূর্বে উল্লিখিত 6,325 এবং 6,450-এর লক্ষ্যমাত্রার দিকে S&P 500-এর বুলিশ প্রবণতা বজায় আছে। 6,051 লেভেল থেকে ওপেন করা লং পজিশন এখনো ধরে রাখা যুক্তিযুক্ত এবং মূল্য পুলব্যাক করলে নতুন লং পজিশন ওপেন করাও যৌক্তিক মনে হচ্ছে।